"রিস্তেদারের কাঁটা" বইয়ের পিছনের কভারের কথা: বাসু বললেন, “শােন টুকু, তােমার বয়স কম, অভিজ্ঞতাও অল্প। যে ঘটনা তােমাদের বাড়িতে ঘটেছে তার ছকটা অতি পরিচিত। যুগে যুগে, দেশে দেশে, এই নাটকটা অভিনীত হয়ে গেছে।... পরিকল্পনার ছকটা সব ক্ষেত্রেই এক রকম। অগাধ সম্পত্তির মালিক বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়েন—হয়তাে তখন তিনি বিপত্নীক, নিঃসন্তান। সম্পত্তির লােভে দূর-সম্পর্কের আত্মীয়েরা এসে জোটে। যারা এতদিন বৃদ্ধের দেখভাল করছিল, নানান ছুতায় তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। পাড়াপ্রতিবেশী শুধুদীর্ঘশ্বাস ফেলে। নৌকার হালটা কজা করার পরেই রিস্তেদারেরা দাবী করে, বৃদ্ধ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন! নিজের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা আর তার নেই। আদালত ওদেরই একজনকে সম্পত্তির অছি নিযুক্ত করে। এখানে নাটকের প্রথম অঙ্কের সমাপ্তি। দ্বিতীয় অঙ্কে বৃদ্ধকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোনও আরােগ্যনিকেতনে, নার্সিংহােমে, কখনাে বা মানসিক উন্মাদাগারে। সেই বিখ্যাত আরবীয় উটের ক্লাসিকাল কাহিনীটি পুনরভিনীত হয়। রিস্তেদারেরা স্থায়ীভাবে সম্পত্তির দখল নেয়—আর উট নিজের তাবু ছেড়ে বাইরে এসে হয়ে যায় ‘অবন-ঠাকুরের’ উট!
Narayon Sanyal ( ২৬শে এপ্রিল, ১৯২৪ - ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক। এছাড়াও তিনি একজন পুর প্রকৌশলী । নিত্য নতুন বিষয়বস্তু নির্বাচন ছিল তাঁর রচনাশৈলীর এক বৈশিষ্ট্য। লেখকের আদি নিবাস নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের খাতায় নাম ছিল নারায়নদাস সান্যাল। ১৯৪৮ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি.ই. সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্সটিট্যুট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া)-এর ফেলো ছিলেন। ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সাহিত্যজগতে নারায়ন সান্যাল তাঁর বকুলতলা পি এল ক্যাম্প ও দন্ডক শবরি গ্রন্থের জন্য বিশেষভাবে পরিচত। পি.ডব্লু.ডি তে চাকরি করাকালীন দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে তাঁর পোস্টিং হয়, জীবনের অভিজ্ঞতায় এই দুটি উপন্যাস লেখেন যা বিদগ্ধ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞান, শিল্প স্থাপত্য ভাস্কর্য ও সামাজিক, ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রচুর লিখেছেন। শিশু কিশোরদের জন্যেও তাঁর রচনা সুখপাঠ্য। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে বিশ্বাসঘাতক, ষাট একষট্টি, হে হংসবলাকা, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আবার যদি ইচ্ছা করো, অরণ্য দন্ডক, অশ্লীলতার দায়ে, না মানুষের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। রহস্য গোয়েন্দা কাহিনীও লিখেছেন, তাঁর কাঁটা সিরিজ নামে খ্যাত বইগুলির মূল চরিত্র ব্যারিস্টার পি কে বাসু স্ট্যানলি গার্ডেনারের প্যারি ম্যাসন এর আদলে তৈরি। তার রচিত কাহিনী নাগচম্পা (যদি জানতেম), সত্যকাম, পাষণ্ড পন্ডিত চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার - অজন্তা অপরূপা-১৯৬৯, বঙ্কিম পুরস্কার - রূপমঞ্জরী-২০০০, পুরস্কারে ভূষিত হন।