"শ্রেষ্ঠ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় পদ্মানদীর মাঝি ও পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসের লেখক হিসেবে। ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’, ‘টিকটিকি’, ‘হলুদপোড়া’, ‘হারানের নাতজামাই’ প্রভৃতি গল্পও তাঁকে দিয়েছে ব্যাপক পাঠক-পরিচিতি। প্রগতিশীল বামচিন্তার পাঠককুলের কাছে তিনি কমিউনিস্ট লেখক হিসেবে বিপুলভাবে আদৃত। আর সূক্ষ্ম সাহিত্য রসবোধের অধিকারী পাঠকেরা মানিকের মধ্যে খুঁজে পান মনোবিশ্লেষণের রূপকার এক অসামান্য জীবনশিল্পীকে। মানব মনস্তত্ত্বের নিগূঢ় বিশ্লেষক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে মানিকের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। বস্তুনিষ্ঠ এই লেখক বহির্বাস্তবতার চেয়ে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়েছেন অন্তর্বাস্তবতাকে। মনোবাস্তবতার রূপকার হিসেবেই তিনি কামনা করেছেন মানুষের জীবনসংকটের মুক্তি। তিনি একান্তভাবে অনুধাবন করতে চেয়েছেন ব্যক্তি ও সমষ্টির সংকটের প্রকৃত রূপ। এবং ভেবেছেন তা থেকে তার মুক্তির উপায়ের কথাও। মানিকের শিল্পীসত্তার তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো : বাস্তবতাবোধ, বিজ্ঞানচেতনা ও আধুনিকতা। কল্লোলগোষ্ঠীর লেখকদের ভাবালুতাদোষের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর তীব্র সমালোচনা। এই ভাবালুতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকেই তিনি তাঁর সাহিত্যে পরিস্ফুটিত করেছেন জীবনের প্রকৃত বাস্তবতা। ফ্রয়েডীয় মনস্তাত্ত্বিক আবিষ্কারের আলোকে মানিক মনোবাস্তবতা রূপায়ণে আগ্রহী হলে তাঁর বাস্তবতাবোধে যেমন গভীরতা সৃষ্টি হয়, তেমনি মার্কসীয় নন্দনভাবনা তাঁর সমাজবাস্তবতার চেতনায় আনে ব্যাপক বিস্তার। মানিক বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন বলেই যে তাঁর মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা প্রসার লাভ করেছে তা না। কিশোর বয়স থেকেই তাঁর মধ্যে জন্ম নিয়েছিল ‘কেন’-ধর্মী জীবনজিজ্ঞাসা। সবকিছুর মধ্যেকার কেন-র উত্তর খুঁজতে গিয়েই তাঁর মধ্যে জন্ম নিয়েছিল সর্বসংস্কারমুক্ত, অলৌকিকতার প্রতি বিশ্বাসমুক্ত একটি যুক্তিশীল মন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুক্তি দিয়েই সবকিছুর বিচার করেছেন। ফলে তাঁর সাহিত্যেও অনুপ্রবেশ করতে পারেনি যুক্তিহীন কোনো বিষয়। যুক্তির মাধ্যমেই কোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জনের এই নীতিই তাঁর সাহিত্যকে দিয়েছে এমন ঋজুতা।
জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল, বর্তমান পিরোজপুর জেলার সেহাঙ্গল গ্রামে। তিনি পাঠ গ্রহণ করেছেন সেহাঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাভ করেছেন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি। শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে, বর্তমানে বাংলা বিভাগে।