"মুক্তিযুদ্ধের শতগল্প-প্রথম খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চরিত্র জনসাধারণ। যে সাধারণ মানুষ জীবনে রাইফেল ছুঁয়ে দেখেন নি, তাঁরাই তা হাতে তুলে নিয়েছিলেন চরম সংকটের দিনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুপ্রশিক্ষিত সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের বলিষ্ঠ চেতনার শাণিত বল্লম হাতে নিয়ে। বলা কঠিন—কে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় নি। বাঙালি, আদিবাসী সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। দলমত নির্বিশেষে সকল দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী, নেতা, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, বি ডি আর, সেনানী, শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, ছােট মাঝারি ঊর্ধ্বতন চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী থেকে আরম্ভ করে প্রান্তিক কৃষক, মজুর, নিরন্ন, নিঃস্ব, ভাসমান, সমাজচ্যুত, পদদলিত—সবাই যুদ্ধ করেছেন এক হয়ে। সকল বয়সের নারী-পুরুষ, ধনীদরিদ্র অংশ নিয়েছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বাঙালি মাত্রই সেদিন মিলিত হয়েছেন এক লক্ষ্যে এক বিন্দুতে। এক কথায় বলা চলে, জাতি সংঘবদ্ধ ও সংহত হয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছে সে সময় এক অত্যাশ্চর্য প্রাণশক্তিতে আর অমিত দেশপ্রেমে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শিল্প-সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে। আমাদের কবি, সঙ্গীত শিল্পী, আলােকচিত্রী, চিত্রকর, ভাস্কর, গল্পকার, নাট্যকার, নিবন্ধকার, চলচ্চিত্রকার প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধকে প্রধান উপাদান করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। লক্ষ মানুষের আত্মদান মূর্ত হয়ে আছে এ সব শিল্প ও সাহিত্যকর্মে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারণে ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক আগে থেকেই এঁদের অবদান অপরিসীম। বাঙালি জাতিসত্তা চেতনার উন্মেষ ও বিকাশে এঁরা ভূমিকা পালন করে চলেছেন দীর্ঘকাল ধরে। এঁরাও মুক্তিযােদ্ধা মননে, দর্শনে, চিন্তায়, চৈতন্যে।
হােসনে আরা শাহেদ। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, কলাম লেখক প্রতিষ্ঠাতা _ অধ্যক্ষ, শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (অবসর প্রাপ্ত)। লেখা তাঁর সব ধরনের- প্রবন্ধ, গল্প, রম্যকথকতা, | চরিত্র-চিত্রন, রূপান্তর, সম্পাদনা, শিশুতােষ, পাঠ্যপুস্তক সব মিলিয়ে এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৭৬। বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘শাড়ি' গ্রন্থটি পাক ভারত উপমহাদেশে শাড়ির ওপর প্রথম গবেষণা গ্রন্থ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত ইয়াসির আরাফাতের ওপর ২০০৫ সালে। তার লেখা প্রকাশিত বইটিও এদেশে আরাফাতের ওপর প্রথম স্বাধীনতার পর পুরাে সত্তর ও আশির দশক জুড়ে অধুনালপ্ত দৈনিক বাংলায় তার পথের পাঁচালি’ কলামের জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন। বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সােসাইটি, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, একুশে চেতনা পরিষদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জীবন সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য (১৯৯১-৯৩ এবং ১৯৮৩-৮৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য (১৯৮৩-৯৫)। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবাের্ডের সদস্য (২০০০ সাল থেকে) বর্তমানে নিমগ্ন পাঠে ও লেখায়। পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর, গােপালগঞ্জ শ্বশুরালয়, বসবাস ঢাকায়।