বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পরবর্তী মাইলফলক হিসেবে শহীদুল জহির অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। আশির দশকে আবির্ভূত এই প্রাতিস্বিক কথাশিল্পী প্রায় দুই যুগের সাহিত্যসাধনায় স্বল্পসংখ্যক গল্প ও উপন্যাস লিখেই যুগন্ধর সাহিত্যিকের খ্যাতি অর্জনের অন্যতম দাবিদার। উত্তরাধুনিক সাহিত্যভাবনার রূপায়ণ তাঁর গল্প ও উপন্যাসে যোগ করেছে বিশিষ্ট মাত্রা। স্বল্পভাষী, নিভৃতচারী এ সাহিত্যিকের লেখনির নিজস্বতা তাঁর প্রতিটি রচনাতেই আলাদাভাবে ফুটে ওঠে। কারণ, যে বিষয়কে তিনি প্রতিপাদ্য করেন, তার বাণীরূপ হিসেবে অবলম্বিত গদ্যরীতিতে রয়েছে স্বতন্ত্র ভঙ্গি, বাক্যবিন্যাসের ভিন্নতা এবং আঙ্গিকের বৈচিত্র্যময় কারুকাজ। পুরাতন ঢাকার মহল্লা ও ঘুপচি গলি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্রাম, শহর, নগরের জনপদগুলোর জীবনপ্রবাহের চালচিত্র বয়ানে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর সংকট, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংখ্যালঘু নিধন, অপরতাবোধ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পেশীশক্তির মদমত্ততা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের সমবায়ী অভিঘাত সাধারণ মানুষের জীবনে বিবিধভাবে যে অবরুদ্ধতার সৃষ্টি করে, সেই প্রসঙ্গগুলো তাঁর লেখায় বারবার উঠে আসে। তাশরিক-ই-হাবিব তাঁর তিনটি গল্পগ্রন্থভুক্ত গল্পসমূহকে গবেষণার উপজীব্য করার পাশাপাশি কোনো কোনো গল্পের আঙ্গিক নিয়েও দীর্ঘ পরিসরে আলোচনা করেছেন। শহীদুল জহিরের গল্পসমূহ বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভুক্ত। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, শিক্ষার্থী, গবেষক, সমালোচক, সর্বোপরি তাঁর পাঠকদের কৌতূহলকে নিবৃত্ত করতে এ বইটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আমরা মনে করি।
তাশরিক-ই-হাবিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের 'ইউজিসি পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলোশীপ-২০১৮' এর মনোনীত ফেলো হিসেবে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের কথাশিল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ইতঃপূর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (ত্রিশাল, ময়মনসিংহ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এমফিল ডিগ্রি ও ২০১৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ 'বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে প্রান্তজনের জীবনচিত্র' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রথম এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভের গ্রন্থরূপ হিসেবে মর্যাদায় আসীন। মৌলিক ও ভিন্নধর্মী গবেষণা হিসেবে তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ 'বাংলাদেশের উপন্যাসে লোকজ উপাদানের ব্যবহার' বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক 'রিসার্চ গ্র্যান্ট' পেয়েছে। তাঁর লেখা বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্য পত্রিকা', 'কলা অনুষদ পত্রিকা', 'প্রাচ্যবিদ্যা পত্রিকা', 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা'সহ 'বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা', 'বাংলা একাডেমি পত্রিকা' ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ভাষা-সাহিত্যপত্র', রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সাহিত্যিকী', বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (রংপুর) 'বাংলা গবেষণা সংসদ' প্রভৃতি গবেষণামূলক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির মোট ৭টি গবেষণা গ্রন্থ পুনঃসম্পাদনাও করেছেন।