“ভালো থেকো ভালোবেসে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ অর্ণা হঠাৎ হাত বাড়াল, খুব নিরবে, খুব গােপনে, আনমনে। সাদিদ টের পেল তা। আড়চোখে দেখল, তার পাশে বসা জ্যোৎস্নামােড়ানাে মেয়েটা কেমন অপার্থিব হয়ে উঠছে, কেমন অচেনা হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।। ঘাসের ওপর পড়ে থাকা হাতটা সে সরাল না, একটু একটু অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে সেই হাতটা, একটা স্পর্শের অপেক্ষায় অল্প অল্প কাঁপছে সেটা। টিংকুর দিকে এগিয়ে যাই আমি চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে আমার। তাই দেখে টিংকু প্রচণ্ড চিল্কার করে বলল, ‘খবরদার চোখে পানি আনবি না। গত কয়েক বছর চোখের পানি অনেক সস্তা করে ফেলেছি, আর না। কথাটা বলে টিংকু নিজেই কেঁদে ফেলে। চোখ দিয়ে ধীরে। ধীরে পানি পড়ছে ওর, আর ডুকরে ডুকরে উঠছে ও। মােবাইলটা বেজে ওঠে তখনই। চমকে উঠি। এত সকালে ফোন! হাতে নিই টেবিলের ওপর রাখা মােবাইলটা। স্ক্রিনে নামটা দেখে ভয়টা আরাে বেড়ে যায়। গলায় অবাক সুর তুলে। বলি, “রাজকন্যা, তুমি এত সকালে! ‘রাজকন্যা!’ গলাটা মধুময় করে রাজকন্যা বলল, ‘খুব শুনতে ইচ্ছে করছিল এই ডাকটা। ভয় পেলে সজলের নাক কাপে। সম্পূর্ণ নাক না, নাকের মাথা কাঁপে, তিরতির করে কাঁপে। ওর এখন নাক কাঁপছে। সজলের মনে হচ্ছে, দরজা খােলার সঙ্গে সঙ্গে কেউ একজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে কিংবা তাকে ধাক্কা দিয়ে কেউ একজন ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে পালাবে অথবা ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে থাকতে দেখবে কাউকে। এমনও হতে পারে মৃত কাউকে শুয়ে থাকতে দেখবে মেঝেতে।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।