অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১) ॥ জন্ম গোকর্ণ গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১ জানুয়ারি ১৯১৪। ঔপন্যাসিক। এক দরিদ্র ধীবর পরিবারে জন্ম। শৈশবে পিতৃমাতৃহীন হন। গ্রামের মালোরা চাঁদা তুলে তাঁর পড়ার খরচ চালাতো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস (১৯৩৩)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুদিন আই.এ. ক্লাসে অধ্যয়ন। ১৯৩৪-এ জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় গমন। সেখানে মাসিক ‘ত্রিপুরা’ পত্রিকায় শুরু করেন তাঁর সাংবাদিক ও কর্মজীবন। ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রতিষ্ঠিত ‘নবশক্তি’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে যোগদান (১৯৩৬)। এর সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন। নবশক্তি প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর ‘মাসিক মোহাম্মদী’র সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগদান। তিন বছর এ পদে দায়িত্ব পালন। এ সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদেও সাংবাদিকতা। নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৪৫-এ সাপ্তাহিক দেশ-এ সম্পাদকের সহকারী পদে নিযুক্ত লাভ। আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন। আয় বাড়াবার জন্য বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায় পার্ট টাইম চাকরি গ্রহণ। তাঁর সুবিখ্যাত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম প্রথম মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত। কয়েকটি অধ্যায় মুদ্রিত হওয়ার পর এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি রাস্তায় হারিয়ে যায়। বন্ধুবান্ধব ও পাঠকদের আগ্রহে পুনরায় কাহিনীটি লেখেন। কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে যাওয়ার আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বন্ধুবান্ধবকে দিয়ে যান। লেখকের মৃত্যুর কয়েক বছর পর উপন্যাসটি তিতাস একটি নদীর নাম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। এই একটি মাত্র উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ। অদ্বৈত মল্লবর্মণ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তর্দৃষ্টির বলে এতে ধীবর সমাজের জীবনসংগ্রামের কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বরতা। তাঁর গ্রন্থপ্রীতি ছিল অসাধারণ। নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্যেও বই কিনেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধুরা রামমোহন লাইব্রেরির হাতে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডার তুলে দেন। সাহিত্য, দর্শন ও চারুকলা বিষয়ক এমন সুচিন্তিত ও সুনির্বাচিত সংগ্রহ দুর্লভ। লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এই সহস্রাধিক গ্রন্থ সংগ্রহকে একটি পৃথক বিভাগে রক্ষা করেছেন। মৃত্যু. ষষ্ঠীপাড়া, কলকাতা, যক্ষ্মায়, ১৬ এপ্রিল ১৯৫১। [সূত্র : চরিতাভিধান বাংলা একাডেমি, ঢাকা]
গ্রন্থ প্রসঙ্গে আমরা সত্যিই গর্বিত যে মনস্বী অদ্বৈত মল্লবর্মণ বাংলাদেশেই জন্মেছিলেন। তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল এখানেই। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে উত্তীর্ণ হন যখন -তখন তিনি বাংলাদেশেই। তাঁর সাহিত্যভাবনা ও গবেষণার মৌল-উপাদান উপকরণও সংগৃহীত হয়েছে পূর্ব বাংলার জীবন ও জগৎ থেকে। শিল্পী-স্রষ্টার যে-মনন অদ্বৈতের, তাও গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও বাঙালি-সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে। জগৎ ও জীবনের একান্ত সতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই রূপকল্প বাংলাদেশে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে অসামান্য। সাহিত্যে চলচ্চিত্রে নাটকে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’র জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়। অথচ বাংলাদেশ থেকে অদ্বৈত মল্লবর্মণের কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। তাঁর চিন্তাচর্চার জন্য গড়ে ওঠেনি জাতীয় পর্যায়ের কোনো সংগঠন। সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়নি অকালপ্রয়াত এই লেখকের রচনাবলী সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কোনো পরিকল্পনা। বাংলাদেশের সাহিত্য তথা প্রকাশনা জগতের এই দৈন্য ও গ্লানি মোচনের জন্য এগিয়ে এসেছেন সূচীপত্রের কর্ণধার খ্যাতিমান শিশু-সাহিত্যিক ও সংগঠক জনাব সাঈদ বারী। তাঁকে সুধীসমাজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ যে মরমীশিল্পী অদ্বৈত মল্লবর্মণের যাবতীয় রচনাদি পাঠকসমাজে সুলভ করার এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেন। স্বতন্ত্রভাবে ভূমিকাসহ তিতাস একটি নদীর নাম, শাদা হাওয়া ও রাঙামাটি-এই তিনটি মৌলিক উপন্যাস নিয়ে একটি উপন্যাসসমগ্র ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ : জীবন ও কর্ম শীর্ষক তিনটি গ্রন্থ পাঠক সমাজে সহজলভ্য করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এবার তিনি অদ্বৈত মল্লবর্মণ-এর সকল মৌলিক রচনা ও অনুবাদ একত্রে জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব অর্পণ করে তিনি আমাকে অশেষ আনন্দ লাভের সুযোগ করে দিয়েছেন। এজন্য তাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মনীষী অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রতি প্রথম আমাকে আকৃষ্ট করেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। পত্র-পত্রিকার ওপর কাজ করার সময়ে তিনি বারবার বলেন মাসিক মোহাম্মদীতে অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল, কিন্তু কয়েক সংখ্যা প্রকাশের পর পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায়...। এ থেকেই পত্র-পত্রিকায় অদ্বৈত মল্লবর্মণের নাম দেখলেই আমি শ্রদ্ধাভরে নোট নিয়েছি। ঢাকা ও কলকাতার লাইব্রেরি থেকে অদ্বৈত মল্লবর্মণের দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন রচনা সংগ্রহ করে তাঁকে দিয়েছি। তিনি ‘লোকায়ত' পত্রিকায় কিছু কিছু একালের পাঠকদের জন্য তা প্রকাশও করেছেন। অন্যান্য পত্র-পত্রিকায়ও তাঁর অনেক দুষ্প্রাপ্য রচনা সংগ্রহ করে টীকাভাষ্য সহকারে প্রকাশ করেছি।
আর এই সুবাদে পরিচিত হই কলকাতায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর অচিন্ত্য বিশ্বাস এবং অদ্বৈত মল্লবর্মণ এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল সোসাইটির অন্যতম কর্ণধার শ্রী রণবীরসিংহ বর্মণের সঙ্গে। রণবীরসিংহ বর্মণ মহাশয় আমাকে অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রাপ্ত সকল রচনার সকল সংস্করণ ও উৎস পেতে সাহায্য করেন। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি প্রভৃতি থেকে আমি অদ্বৈত মল্লবর্মণের রচনার কপি লাভ করেছি। এক্ষণে সকলের ঋণ আমি স্মরণ করছি।
অধ্যাপক অচিন্ত্য বিশ্বাস অদ্বৈতর আরো রচনা কোথায় কী আছে খুঁজে দিতে অনুরোধ করলে আমি আমার অনুসন্ধান সুদৃঢ় করি। বাংলাদেশের কোনো এক সরকারি প্রতিষ্ঠান অদ্বৈত মল্লবর্মণের রচনাবলী প্রকাশের আগ্রহ জানিয়ে আমাকে পাণ্ডুলিপি জমা দিতে বললে আমি এই উদ্যোগকে সুসংগঠিত করি। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় সূচীপত্রের প্রস্তাব আমাকে আনন্দ দেয়।
আমরা জানি অদ্বৈত মল্লবর্মণের প্রথম প্রকাশিত পুস্তক ভারতের চিঠি পার্লবাককে কেবল তাঁর জীবৎকালে প্রকাশিত হয়েছিল। মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯৫৬ সালে কলকাতার পুথিঘর প্রাইভেট লিঃ থেকে প্রকাশিত হয় তিতাস একটি নদীর নাম। ১৯৬১ সনে ভারতের চিঠি পার্লবাককে পুনর্মুদ্রিত হয় কলকাতার বিশ্ববাণী থেকে। ১৯৯০ সনে দেবীপ্রসাদ ঘোষ সাপ্তাহিক নবশক্তি থেকে ১৮টি এবং দেশ ও আনন্দবাজার থেকে ৪টি মোট ২২টি নাতিদীর্ঘ রচনা সংগ্রহ করে বারমাসী গান ও অন্যান্য নামে প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে যথাক্রমে প্রকাশিত হয় শাদা হাওয়া ও রাঙামাটি। এসব দিয়ে ড. অচিন্ত্য বিশ্বাসের সম্পাদনায় কলকাতার দে'জ পাবলিশিং থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচনাসমগ্র। এই রচনাসমগ্রে সংকলিত হয়েছে উপর্যুক্ত রচনাদি এবং আরভিং স্টোনের উপন্যাস Lust for life-Gi অনুবাদ জীবন তৃষা- আর চারটি গল্প ও ছয়টি কবিতা।
কিন্তু এতো কিছুর পরও এখনো বাংলাদেশ থেকে অদ্বৈত মল্লবর্মণের রচনাবলী প্রকাশের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। কারণ আমাদের সংগ্রহে রয়েছে আরও এমন সব রচনা এবং তথ্যাবলী যা এ পর্যন্ত সংকলিত হয়নি। আর বাংলাদেশের লেখকের বই বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রকাশের অধিকারও তো রয়েইছে। রচনাবলীতে মুদ্রিত রচনাগুলোর এই পাঠ তৈরি করা হয়েছে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর একাধিক সংস্করণ এবং সাপ্তাহিক দেশ, মাসিক মোহাম্মদী, সোনারতরী ও চতুষ্কোণ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রাথমিক রূপের সঙ্গে মিলিয়ে। বানান, বাক্য, স্তবক ও অধ্যায় বিন্যাস প্রভৃতিতে যথেষ্ঠ পরিমার্জনা আছে। ফলে অন্যান্য সংস্করণ থেকে এতে স্বাতন্ত্র্য এসেছে।
তিতাস একটি নদীর নাম প্রসঙ্গে বলা দরকার, পুথিঘর প্রকাশিত তিতাস একটি নদীর নাম-এ সব সময় পৃষ্ঠা নম্বর ছাড়া একটি সূচীপত্র দেয়া হত। ১, ২, ৩ ও ৪ ক্রমিকে আটটি শিরোনাম দেয়া হয়। যার কোনো তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যেতো না। পেঙ্গুইন বুকস্ প্রকাশিত A Rever called Titash-GI চারটি চ্যাপ্টারে পৃষ্ঠা নম্বর সহকারে আটটি শিরোনাম রক্ষিত হয়েছে। আমরা পেঙ্গুইন বুকস্-এর অনুকরণে পুস্তকের সৌন্দর্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে পৃষ্ঠা নম্বরসহ আটটি শিরোনামকে আটটি অধ্যায় গণ্য করে পুস্তকটি বিন্যস্ত করেছি।
গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা প্রভৃতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট আধুনিক করার প্রয়াস আছে। এক্ষেত্রে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন পূর্বসূরি অদ্বৈত গবেষকগণ। তাদের ঋণ স্বীকার করছি। এই রচনাবলী সুধী পাঠকসমাজে সমাদৃত হলে আমরা আরো কাজের জন্য উৎসাহ পাব। ইসরাইল খান
অদ্বৈত মল্লবর্মণ : সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি বাংলা সাহিত্যের অমর শিল্পী অদ্বৈত মল্লবর্মণ, সজীবনে অবহেলিত, অ-মূল্যায়িত ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম' নিয়ে সিনেমা হওয়ায় এবং বাংলাদেশ ও বিদেশের বহু কারিকুলামে অদ্বৈত মল্লবর্মণ পাঠ্য বিষয়সূচিভুক্ত করার বদৌলতে তার সম্পর্কে দু'চার কথা জানেন না এমন স্বাক্ষর ব্যক্তিকে এখন খুঁজে পেতে কষ্ট হবে- কিন্তু তাঁর একটি জীবন বৃত্তান্ত ও পূর্ণাঙ্গ রচনাবলী প্রকাশের বা প্রস্তুতির কোন যথাযথ উদ্যোগ এখনও চোখে পড়ে না। অদ্বৈত মল্লবর্মণের মতো একজন মহৎ-শিল্পীর ওপর প্রকাশিত পুস্তক ও প্রবন্ধের সংখ্যা হাতের আঙুলেই গুণে শেষ করা যাবে। অথচ তার সম্পর্কে লেখা বইয়ের সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল যেন সীমাপরিসীমা নেই। সে যাহোক, অদ্বৈতর একটি জীবনপঞ্জি আমরা তৈরি করেছি।
১৯১৪ : জন্ম। পিতার নাম : অধরচন্দ্র মল্লবর্মণ। মাতার নাম অজ্ঞাত। তিন ভাই, এক বোন। জন্মস্থান : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণগাট। ১৯৩৩ : ম্যাট্রিকুলেশন পাস। প্রথম বিভাগ পান। অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আইএ পরীক্ষা দেয়া হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি। ১৯৩৪ : কলকাতায় গমন। ‘মাসিক ত্রিপুরা' পত্রিকার কাজে যোগদান। ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্তর মালিকানায় নবপর্যায়ে ‘নবশক্তি' সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হলে তাতে সহকারী-সম্পাদকের পদে যোগদান। ১৯৩৭ : নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ। ১৯৪১ পর্যন্ত সম্পাদকরূপে দায়িত্ব পালন। ৭ বর্ষ চলার পর স্মৃতি-বিজড়িত সাপ্তাহিক নবশক্তি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে ‘আজাদ', ‘কৃষক', মোহাম্মদী প্রভৃতিতে পার্টটাইম কাজ করে অর্থ উপার্জন ও ব্যাপকভাবে বই কেনা, পাঠ করা এবং লেখালেখির তথা গবেষণার পরিচয় পাওয়া যায়। নবশক্তির পাতায় নামে বেনামে অনেক বিচিত্র লেখা ছাপা হয়।
১৯৩৯ : চয়নিকা পাবলিশিং হাউস গঠন। সঙ্গে ছিলেন বন্ধুরা- যথা কালিদাস মুখোপাধ্যায়, রাখালদাস চক্রবর্তী, সতীকুমার নাগ, সনৎকুমার নাগ প্রমুখ। ঠিকানা : ৭ নবীন কুণ্ডু লেন, কলকাতা। ১৯৪০ : ‘দলবেঁধে' গল্প সংকলন সম্পাদনা। যৌথ সম্পাদক ছিলেন কালিদাস মুখোপাধ্যায়, রাখালদাস চক্রবর্তী, সতীকুমার নাগ। প্রকাশক : সনৎকুমার নাগ। ১৯৪২ : ‘শাদা হাওয়া' রচনা শেষ করেন ১৯.১২.১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে। ‘সোনারতরী' পত্রিকায় ছাপা হয় ১৯৪৮ বা ১৩৫৫ বঙ্গাব্দে। ‘মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় সহ-সম্পাদকরূপে আবুল কালাম শামসুদ্দীনের মনোনয়নে তারই সহকারীরূপে যোগদান। ক্রমে মোহাম্মদীর সম্পাদনার ক্ষেত্রে মূল কর্তাব্যক্তিতে পরিণত হন। নামে-বেনামে মোহাম্মদীতে বেশ কিছু রচনার প্রকাশ। ১৯৪৫ পর্যন্ত মোহাম্মদীতে দায়িত্ব পালন। পাশাপাশি যুগান্তর, নবযুগ, আজাদ, কৃষক, প্রভৃতিতে কাজ করেন, লেখেন প্রধানত অর্থের অভাব পূরণের জন্য।
১৯৪৩ : ‘ভারতের চিঠি-পার্ল বাক্কে' গ্রন্থাকারে প্রকাশ নিজেদের চয়নিকা পাবলিশিং হাউস থেকে। ‘রাঙামাটি' উপন্যাস রচনা। অধ্যাপক ড. অচিন্ত্য বিশ্বাস জানিয়েছেন, এটি ১৯৪৩-৪৫ সময়ের লেখা। প্রকাশিত হয় মাসিক ‘চতুষ্কোণ' পত্রিকায় ১৩৭১/১৯৬৪ সালে। ১৩৭১-এর বৈশাখ থেকে চৈত্র ১২ সংখ্যায় ১টি বাদ দিয়ে ১১ দফায় ছাপা হয়। ১৯৪৫ : ‘সাপ্তাহিক দেশ' পত্রিকায় সাগরময় ঘোষের সহযোগিতায় চাকরিলাভ। এ সময়ে বেতন ভাল ও নিয়মিত পেতেন। পূর্ববঙ্গ থেকে কলকাতায় যাওয়া উদ্বাস্তু আত্মীয়পরিজনদের সাহায্য করতেন। অর্থের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সাগরময় ঘোষ প্রমুখ বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতায় বিশ্বভারতী গ্রন্থণ বিভাগেও খণ্ডকালীন চাকরি প্রাপ্তি এবং ১৯৫০ পর্যন্ত (মৃত্যুর পূর্ববর্তী সক্ষম সময়কালে) এতে দায়িত্ব পালন। মোহাম্মদীতে তিতাস একটি নদীর নাম প্রকাশ শুরু। ১৯৪৬ : মোহাম্মদীতে ‘তিতাস একটি নদীর নাম'-এর প্রাথমিক খসড়া (৭ কিস্তিতে) প্রকাশ। ১৯৪৮ : (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ) : শারদীয়া ‘সোনারতরী' পত্রিকায় ‘শাদা হাওয়া' উপন্যাস প্রকাশ (গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৬, ড. অচিন্ত্য বিশ্বাসের সম্পাদনায়, কলকাতা থেকে।) যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হন। বন্ধুদের সাহায্যে/পীড়াপীড়িতে কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি। রোগমুক্ত হয়ে ষষ্ঠীতলার বাসায় ফেরত গমন। ১৯৪৯ : ১৯ মার্চ ১৯৪৯ ৫ চৈত্র ১৩৫৫ সংখ্যা সাপ্তাহিক ‘দেশ' এ আর্ভিং স্টোন-এর উপন্যাস Lust for life এর অনুবাদ ‘জীবন-তৃষা' প্রকাশ শুরু করেন। ৬২ কিস্তিতে ‘দেশ’-এ প্রকাশ শেষ হয় ২০ মে ১৯৫০ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৭-তে। ১৯৫০ : হঠাৎ আবার যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নীত হন এবং সেখান থেকে আবার পালিয়ে যান। আবার ভর্তি..... ইত্যাদি। ১৯৫১ : ১৬ এপ্রিল নারকেল ডাঙার ষষ্ঠীতলার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ।
সূ চি প ত্র * অদ্বৈত মল্লবর্মণ : সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি / ০৯ * অদ্বৈত মল্লবর্মণ : স্বরূপের সন্ধানে / ১৫ * অদ্বৈত মল্লবর্মণের সমাজ ও সাহিত্যদৃষ্টি / ২৭ * অদ্বৈত মল্লবর্মণ : তাঁর লুপ্ত রচনার খোঁজে / ৩৫ * অদ্বৈত মল্লবর্মণের বেনামী রচনা / ৪২ * অদ্বৈত মল্লবর্মণ সংক্রান্ত একটি বিতর্ক / ৪৮ * অদ্বৈত মল্লবর্মণকে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘গবেষণা’-র সপক্ষে / ৫৩
উপন্যাস -৪৭ তিতাস একটি নদীর নাম / ৪৯ * প্রথম অধ্যায় : তিতাস একটি নদীর নাম / ৬১ * দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রবাস খণ্ড / ৭৩ * তৃতীয় অধ্যায় : নয়া বসত / ১০৭ * চতুর্থ অধ্যায় : জন্ম মৃত্যু বিবাহ / ১৩২ * পঞ্চম অধ্যায় : রামধনু / ১৬০ * ষষ্ঠ অধ্যায় : রাঙা নাও / ২০৫ * সপ্তম অধ্যায় : দুরঙা প্রজাপতি / ২২৮ * অষ্টম অধ্যায় : ভাসমান / ২৪৩
জন্ম ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গােকর্ণ গ্রামে এক মৎস্যজীবী পরিবারে। শৈশবেই মাতৃপিতৃহীন। ১৯৩৩ সালে স্থানীয় অন্নদা। এইচ. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর অর্থোপার্জনের জন্য কলকাতায়। গমন। পেশাগত জীবনের শুরু ত্রিপুরা পত্রিকায়। এরপর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন নবশক্তি, মাসিক মােহাম্মদী, নবযুগ, আজাদ, কৃষক পত্রিকা ও সাময়িকীতে।। উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নামতার স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি। আরভিং স্টোনের উপন্যাস লাস্ট ফর লাইফ-এর বাংলা । অনুবাদ তার আরও একটি উল্লেখযােগ্য সাহিত্য প্রয়াস। মৃত্যু ১৬ এপ্রিল, ১৯৫১।