পরম জ্ঞানের হাকিকত ও স্বরূপ প্রত্যক্ষকারী বিশ্বপ্রসিদ্ধ সফিদের তত্ত্বরহস্য জানার ভেতর দিয়েই নিজের পরিচয় জানলেই মহাপ্রভুর পরিচয় ঘটে। পরম প্রভুর সত্তা বর্ণনার উর্ধ্বের বিষয়। এই অবাচ্যকে যিনি অধিকার করেন, তিনিই সুফি, তত্ত্বজ্ঞানী, আধ্যাত্মিক ও রূহানী প্রাজ্ঞপুরুষ। আশেক মনের গুপ্তভেদ শত শত বছর ধরে সুফিতত্ত্ব ও মরমী চিন্তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে নানা সময়ে অনেক সুফির আবির্ভাব হয়েছিল সমগ্র বিশ্বজুড়ে, তাঁদের মধ্যে মনসুর হাল্লাজই একমাত্র মহান প্রাজ্ঞব্যক্তি যিনি পরম প্রেমের আলিঙ্গনে নিজের অস্তিত্ব লীন করে পরম সত্তার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন স্বীয় অস্তিত্বের মাঝে। এ সাক্ষ্য ছিল একত্বের, অদ্বৈতের। শরিয়ত ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হতে হয়েছিল তাঁকে। হুসাইন বিন মনসুর আল-হাল্লাজের “আনা আল-হক্ক’ ঘোষণায় চরম নির্যাতন নেমে এসেছিল। হাল্লাজ হয়ে উঠেছেন মরমী প্রেমের শহীদ। তিনি প্রমাণ করেছেন, তাঁর রক্ত পরমপ্রেমের জীবন্ত সাক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। পরমের ইচ্ছাই ছিল তাঁর ইচ্ছা। পরম চায় মিলন। আর এ মিলনের পূর্বশর্ত হল মৃত্যুদন্ড। জগদ্বাসীর কাছে তা ছিল আত্মবিসর্জন আর মনসুর হাল্লাজ ও পরম সত্তার কাছে তা ছিল মহামিলন। সৃষ্টিতে প্রভুর অস্তিত্বের বাইরে কিছু নেই। আমিই স্রষ্টার পরিচয়। আমার ভেতর দিয়েই তার কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, প্রজ্ঞা বিজ্ঞানময় শিল্প নিদর্শন- আমার স্বীকৃতিই তার স্বীকৃতি। স্রষ্টাপ্রেমে আত্মবিসর্জনকারী বিশ্ববিখ্যাত সুফিদের তত্ত্বরহস্য, মরমী চিন্তা, সুফিভাবনা ও ধর্মদেশনা তাঁদের জীবদ্দশাতেই ভাবুকশ্রেণি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জন্ম দিয়েছিল আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের অসীম প্রেরণা। যা সমগ্র বিশ্বে শান্তি, সম্প্রীতি, কল্যাণ ও ভ্রাতৃত্বের নজির স্থাপনের শ্বাশত সাক্ষ্য বহন করে আসছে। সমগ্র দুনিয়ায় ইশকে ইলাহী তত্ত্বের পরিচয়, উদার মানবতাবাদী মতবাদের প্রচার, শান্তি সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণের প্রসার ও বিকাশের দ্বারা রাসুল(সা এর আদর্শিক পথ ও মতের অনুসরণের মাধ্যমে যে সকল সুফি কবি ও দার্শনিক সকল প্রতিকুলতা পেরিয়ে কখনও কখনও আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ব ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের পরিচয় ও তত্ত্বরহস্যের আলোকেই আমার এই গ্রন্থের প্রকাশ।
সৈয়দ মোস্তাক আহ্মাদের জন্ম ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর গ্রামে। তার পিতা মাওলানা মুহাম্মদ তমিজ উদ্দীন (র.) ছিলেন একজন পীর ও আধ্যাত্মিক পুরুষ। তার মাতা মনোয়ারা বেগমও ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে আগত। এরকম সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মোস্তাক আহ্মাদ এর ভাগ্য যেন নির্ধারিতই ছিল যে তিনি বড় হয়ে ধর্ম ও সুফি দর্শন নিয়ে লিখবেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের কল্যাণে শৈশব থেকে তার ধর্মীয় শিক্ষার ভিত মজবুত হয়। পাশাপাশি সুফি দর্শন, মরমী দর্শন, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি বিষয়েও পারিবারিকভাবে শিক্ষা লাভ করেন। তাই তো মোস্তাক আহ্মাদ এর বই সমূহ আধ্যাত্মিকতা ও দর্শন থেকে শুরু করে ধর্মীয় ইতিহাস, অনুশাসন, আত্মোন্নয়ন, মানবজীবন ও দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান ও অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস। মোস্তাক আহমাদ একজন দক্ষ মোটিভেটর। মেডিটেশন ও নানাবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম। বর্তমানে ‘ড্রিমওয়ে ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ’ এর ড্রিমওয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তথা সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। মানবোন্নয়ন, ব্যক্তিক উৎকর্ষ সাধন, সুফি ও মরমী দর্শন নিয়ে দেড় শতাধিক পাঠকপ্রিয় বই লিখেছেন তিনি। মোস্তাক আহমাদ এর বই সমগ্র ব্যক্তিজীবনে সমৃদ্ধি ও সাফল্যের চূড়ায় আরোহণের প্রেরণা দেয়, ব্যক্তিমনের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথ দেখায়, সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষুধা জাগ্রত করে। ‘দ্য ম্যাজিক অব থিংকিং বিগ’, ‘বুদ্ধি ও বিনিয়োগ শেয়ার ব্যবসায় সেরা সাফল্য’, ‘মেধা বিকাশের সহজ উপায়’, ‘ইতিবাচক চিন্তার শক্তি’, ‘বিজনেস স্কুল’, ‘মাওলানা রুমীর আত্মদর্শন’, ‘লালন সমগ্র’, ‘টাকা ধরার কৌশল’, ‘দিওয়ান-ই-হাফিজ’, ‘দিওয়ান-ই-শামস তাবরিজ’, ‘আত্মোন্নয়ন ও মেডিটেশন’ ইত্যাদি তার কিছু জনপ্রিয় বই।