মগ ভরে কফি এনে বিছানায় বসলাম আমি। মাথা নিচু করে ছিল তুসী। ঝট করে মাথা তুলে বলল,‘কোনো মানুষ জানা আছে তোমার, যে খুন করতে পারে, যাকে বলে প্রফেশনাল কিলার? বুকের ভেতটা কেঁপে ওঠে একটু। মুখের আদলটা চেঞ্জ হতে চায়, কোনো রকমে ঠেকিয়ে রাখি তা। কিছুটা জোর করে হাসি এনে বলি, ‘প্রফেশনাল কিলারকে কেন দরকার তোমার?’ ‘তার আগে বলো আছে কি না?’ ‘যদি বলি, আছে।’ ‘নাম্বারটা দাও তার।’ ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে করতে তুসী বলে,‘যত টাকা লাগে দেব, একটা মানুষ খুন করতে হবে তাকে।’ মোবাইল ধরা তুসীর হাতটা চেপে ধরি আমি। মুখটা অরো হাসি হাসি করে ফেলি, ‘কাকে খুন করতে হবে বলো তো?’ আমার হাত থেকে তুসী ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘তোমাকে বলে লাভ নেই।’ ‘তবুও শুনি না।’ পূর্ণ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুসী দৃঢ় গলায় বলল, ‘ড্যাডকে।’ ‘হঠাৎ!’ শব্দ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে তুসী, কিছু বলে না। বিছানায় পড়ে থাকা ওর হাতটাতে হাত রাখি আমি। আমি টের পাই বুকের ভেতরটা কাঁপছে ওর। একটু পর নাক টানার শব্দ কানে আসে আমার। চোখ দুটো বড় হয়ে যায়- গত তিন বছরে এই প্রথম তুসীকে কাঁদতে দেখলাম আমি। দেড় বছর আগে ওর প্রিয় ফুপু মারা গিয়েছিল, তখনো কাঁদতে দেখিনি ওকে। কিন্তু আজ কাঁদছে!
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।