একজন প্রতিভাধর কবির নাম ইনাম-আল হক। তার প্রকাশিত ছড়ার বই ‘লক্ষ আলোর প্রাণ’ হাতে পেয়ে আমি বেশ পুলকিত হয়েছি। বেশ কয়েকবার মন দিয়ে পাঠ করার পর বইটা সম্পর্কে আলোচনার লোভ সামলাতে পারছি না। বাঙালি জাতির উপর রয়েছে লেখকের অপরিসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। বইয়ের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে লিখেছেন এভাবে : শেখ মুজিবুর রহমান, তুমি বাংলায় বহমান স্বাধীনতার অনন্ত সূর্য, জানি সে তোমার দান বুকের মাঝে রত্ন তুমি, শেখ মুজিবুর রহমান, তোমার সাথে আমরাও গেয়েছি, বিজয়ের সেই গান চোখের মাঝে জ্যোতি তুমি, বাংলার মাঠে ধান তোমায় কখনো ভুলে যাবো না, লক্ষ আলো প্রাণ। কবিতা : শেখ মুজিবুর রহমান কবি ভালোবাসেন দেশকে, এই দেশের আলো বাতাসে তিনি বড় হয়েছেন, নীল আকাশ দেখে বার বার মুগ্ধ হয়েছেন। সবুজ পাতায় শিশিরের জল, শান্ত সূর্যের মিষ্টি রোদেলা হাসি, রাখালের উদাস সুরে গান কবিকে দিয়েছে প্রাণ, দেশ নিয়ে তার লেখা : মায়ের আঁচলে ঘেরা, ফুলের কাছেতে ফেরা, এই যে আমার দেশ মমতায় আছে বেশ। কবিতা :এই যে আমার দেশ মায়ের ভাষার জন্য আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে অনেকগুলো বছর। অনেক রক্ত ঝরিয়ে আমার জাতি মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ভাষার জন্য এতো বড় আত্মত্যাগ কোন জাতি কখনো করে নাই। আজ বাংলা ভাষা সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে। বাংলাভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ভাষা নিয়ে কবিতা লেখা : কবরের একা ঘরে জানি ভাষার তরে, শুয়ে আছে যারা মরে নাই তারা, কবিতা : অমর একুশের পাখি বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। অসংখ্য নদী বয়ে গেছে দেশের উপর দিয়ে। নদীর উপর একটা টান অনুভব করেন সব কবিরা। নদী নিয়ে অনেক সৃষ্টিশীল লেখা রয়েছে, যা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। নদী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য কবিতা, ছড়া, গান, গল্প, উপন্যাস, নদী নিয়ে কবির লেখা : চারুলতা নদী বহে নিরবধি, সারা রাত জেগে বাতাসের বেগে, ছুটে চলে একা পৃৃথিবীকে দেখা, দূর থেকে দূরে সাগরের সুরে। কবিতা : চারু লতা নদী বিশ্ব মানবতা যখন বিপন্ন, দেশে দেশে যুদ্ধের বিভীষিকা রেহাই পাচ্ছে না মহিলা ও শিশুরা। অসহায় মানুষের আর্তনাদে ভেঙ্গে পড়তে চায় আকাশ। লাশে যখন পাহাড় জমে যাচ্ছে, তখন আমরা বিবেকের বড় অপরাধী, কবি তখন কিছু আলোকিত মানুষের স্বপ্ন দেখেন, যাঁরা সবার উপরে মানুষকে ভালোবাসেন, যারা মানুষের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন। যেমন কবি লিখেছেন : আবার জেগে ওঠো, মাদার তেরেসার প্রাণ মানুষ পাবে সেবা,ভালোবাসার ঘ্রাণ, তোমার চোখে মানুষ, হয়ে গেছে এক জাতি আঁধারের মাঝে তুমি, প্রথম জ্বেলেছো বাতি। নিজের জীবন বিকিয়ে দিয়েছো, মানুষের জয় গানে কত শান্তি সুধা ছিলো, তোমার অমিয় প্রাণে, পৃথিবী তোমার বাড়ি, সব দেশ তোমার ঘর সবাই কে তুমি আপন করেছো, কাউকে করো নাই পর। কবিতা : জেগে ওঠো মাদার তেরেসার প্রাণ মা ছোট একটা মধুর শব্দ। যতবার ডাকি বুক ভরে যায় শান্তিতে। মা ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। মায়ের মতো দরদী পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না। মা আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষক তাঁর কাছ থেকে আমরা ভাষা শিখি, পারিবারিক সামাজিক আচার আচরন, আরও অনেক কিছু আমরা মায়ের কাছ থেকে পাই। কবি মা সম্পর্কে লিখেছেন এভাবে : আকাশের গায়ে পরীর পাখা আমার গায়ের চাদর, মনের মাঝে শান্তি আনে মায়ের একটু আদর। মা যে আমার স্বপ্ন তারা মা আকাশের চাঁদ মায়ের মুখটা যতই দেখি মেটে নাতো সাধ। কবিতা : মায়ের জন্য ভালোবাসা গ্রামের সবুজ শান্ত রূপ মানুষকে সহজেই আকর্ষন করতে পারে গ্রামের আঁকা বাঁকা সরু মেঠো পথের সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো। নিরিবিলি পরিবেশ, মাটির মমতা মাখা মানুষের প্রাণ। ছোট নদী বৈশাখে শুকিয়ে যায়। রাখাল গরু নিয়ে মাঠে। রাতে রাখালের উদাসী বাঁশিতে মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো, বর্ষায় শাপলা ভরা ঝিলের শুভ্রতা। শরতে কাঁশফুলের বন। গ্রাম নিয়ে কবির লেখা এভাবে : যেখানে আছে চিত্রা নদী পাল তুলে যায় নাও, মিলে মিশে আশে আছে সবাই মায়ায় ঘেরা গাঁও। যেখানে আছে মাধবীলতা সবুজের দেখা পাবো, মাটির টানে ফুলের ঘ্রাণে মাধুরীর গাঁয়ে যাবো। কবিতা : মাধুরীর গাঁয়ে যাবো চাঁদের আলো, কার না লাগে ভালো, জোসনার রাত পরী নেমে আসে ধরণীতে। জোসনার জলে স্নান তবু না ভরে প্রাণ। জোসনার তেষ্টা পেয়ে যায় মনে ছুটে যাই বনে। জোসনা মানুষকে আবেগ আপ্লুত করে বার বার। কত লোক জোসনা রাতে নিশাচর হয়ে যায়। কবি লিখেছেন এভাবে চাঁদ নিয়ে : শিশিরের জল পড়ে অবিরল, ফুল পাতা ঘাসে চাঁদ মামা হাসে। কবিতা : চাঁদ মামা হাসে বর্তমান সময়ে শিশুদের উপরে নেমে এসেছে খড়গ। শিশু অপহরণ, শিশু হত্যা, নানা ধরনের মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার শিশুরা। পরকীয়া প্রেমের বলি হচ্ছে শিশুরা। যারা ফুলের মতো শিশুদের ভালোবাসে না, তারা কখনো মানুষের খাতায় নাম লিখতে পারে না। তারা মানুষ নামের পিশাচ। শিশুদের নিয়ে কবির লেখা এভাবে : আর কেউ যেনো হত্যা না করে শিশুদের অধিকার, রাসেলের মতো মহান শিশুরা আসে না তো বারে বার। বাঁচিয়া থাকিলে শেখ রাসেল কতো কি পাইতো দেশ, কতো কিছু সে হইতে পারিত বলিয়া হবে না শেষ। কবিতা : শেখ রাসেল বাবাকে নিয়ে অনেকের অনেক সুখ স্মৃতির সম্ভার আছে। যা কখনো ভুলে থাকা যায় না। বাবা কখনো অনেকের ভালেঅ বন্ধু হয়ে যেতে পারে যে কোনো ব্যপারে তার সাথে শেয়ার করা যায় অনায়াসে। বা চান ছেলেকে যতটা উপরে তুলে দেয়া যায়, নিজের জীবনে যেটা করতে পারেননি তিনি চান সেটা ছেলের দ্বারা পূরণ করতে। সেই বাবা যখন না ফেরার দেশে চলে যান ! তখন কবির কলম থমকে দাঁড়ায় এভাবে : কি করে বলি, কি করে জানাই দুনিয়ার বুকে, বাবা আর নাই, চলে গেছে একা, আপনার দেশে বেহশতের দুয়ার, যেই খানে মেশে। কবিতা : দূরের প্রজাপতি হিংসা কখথনও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না মানুষের। মানুষকে ভালোবাসা মানুষের ধর্ম। মানুষের সেবার মাঝে প্রকৃত জীবন নিহিত আছে। মানুষের কল্যাণে যারা কাজ করে না, তারা কখনও বড় হতে পারে না, কবি লিখেছেন এভাবে : সেবার মাঝে জীবন পাবে সেবায় পাবে সব, সেবার মাঝে শান্তি পাবে পাখির কলরব। হিংসা বিবাদ যারা করে তারা মানুষ নয়, ভালোবেসে সব মানুষের হৃদয় কর জয়। কবিতা : মানুষের সেবা একটা বই হতে পারে মানুষের বন্ধু। একটা বই একটা মানুষের জীবন ধারায় পরিবর্তন আনতে পারে। বই মানুষের মানসিক বিকাশে বিরাট ভূমিকা রাখে। একটা গল্প একটা কবিতা মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দিতে পারে। চোর হয়ে যেতে পারে সাধু। বই একটা দেশ জাতিকে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারে। কবি লিখেছেন এভাবে : একটা বই আনতে পারে রাত্রি শেষে ভোর, একটা বই খুলতে পারে কারাগারের দোর। একটা বই খুলতে পারে মনের হাজার চোখ, একটা বই জাগাতে পারে হাজার ও বন্দী লোক। একটা বই হতে পারে লক্ষ চাঁদের আলো, একটা বই হতে পারে বন্ধুর চেয়ে ভালো। ফুল তার সুমিষ্ট সুবাস ও রূপে মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলে। ফুল পবিত্রতার প্রতীক। ভালোবাসা বিনিময়ের সুন্দর মাধ্যম। যারা ফুল ভালোবাসে তারা মানুষকে হত্যা করতে পারে না কখনো। ফুল মানুষের মনের গভীরতা বয়ে নিয়ে আসে। কবি লিখেছেন এভাবে : ফুলের তুমি পরশ পাবে ফুলের পাবে ঘ্রান, ফুলের মতো গড়তে হবে নতুন করে প্রাণ। ফুলের উপর ফুল ছড়ানো তাহার পরে ফুল, ছন্দে গন্ধে জাগাও এবার জীবন নদীর কূল। কবিতা : ফুল ছড়িয়ে যাই প্রকৃতির মাঝে অনেক সুন্দর কিছু থাকে। সেই সব সৌন্দর্য দেখার জন্য অনুভূতিশীল চোখের দরকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে অনেক কবি কবিতা লিখে গেছেন যা স্মরণীয় হয়ে আছে আজও। প্রকৃতি তার রূপ পাল্টায় প্রতিনিয়ত। কবি লিখেছেন এভাবে : যেথায় চাঁদের আলো পাতার ঘরে ছাওয়া , ফুল পাখিদের গান আপন সুরে গাওয়া। কবিতা : পাল তোলা নাও
কবি ইনাম-আল হক ১৯৭৭ সাালে ৭ই অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অর্ন্তভূক্ত ৯ নং রাজপাট ইউনিয়নের রাজপাট গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। পিতা: আজহাজ্ব নিজাম উদ্দীন মোল্যা, মাতা: সুফিয়া বেগম। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। প্রাথমিক শিক্ষা সেহাচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। উচ্চতর শিক্ষা দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান আদর্শ মহাবিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'হৃদয়ের কাঁটা'- একুশে বইমেলা ২০১৪। তিনি একাধারে ছড়া, গল্প, কবিতা, নাটক, গান ও উপন্যাস, লিখছেন।