তত্ত্বগতভাবে, ইহসান চর্চা, যা তাসাউফ নামে লোকপ্রিয়, তা এমন কিছু আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে থেকেছে যারা উচ্চাকাক্সক্ষী মুসলমানকে ইসলামের গভীর মূল্যবোধ ও মর্মকথার ভিত্তিতে ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রশিক্ষণ দান করেন। সমাজের সর্বস্তরের মুসলমানের এটাই সেই মিলনক্ষেত্র, যার প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যক্তি চরিত্রে উৎকর্ষসাধন এবং সমষ্টিজীবনে ঐক্যবদ্ধতা । তথাপি, এই ব্যবস্থাপনার উদার মনোভাব প্রায়শই এর নিজস্ব খ্যাতিকে ভূলুন্ঠিত করেছে। এখানে কখনই সন্দেহকে লালন করা হয়নি। ফলে, এখানে অনায়াসে ভুয়া বিশেষজ্ঞদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যারা এই খোলামনের সুযোগ নিয়ে ইসলামের বিকাশকে বিঘ্নিত করেছে এবং ইসলামের মূল আকিদা ও আমলের মধ্যে নানাবিধ বিকৃতি সাধন করেছে। পরিনতিতে, সাধারণ মুসলমানের মনে এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়, এবং তারা এটিকে আরেকটি ফেরকা হিসাবে গণ্য করতে শুরু করে-যা প্রকৃতপক্ষে এর আদি মহৎ কার্যপ্রণালীর সম্পূর্ণ বিপরীত। এই পুস্তকে উক্ত অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং বিশ্লেষণ করা হয়েছে কিভাবে তারা তাসাউফের বিষয়বস্তু ও ভূমিকার অপব্যাখ্যা করার কাজে সক্রিয় থেকেছে। মোট কথা, এক দিকে এই ছদ্মবেশীরা সাধারণ মুসলমানের ধর্মীয় পরিবেশে নতুন নতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে, আর অপর দিকে উলামা ও মাশায়েখের নেতৃত্বের প্রতি তাদের মনে বিরূপ ধারণা প্রোথিত করার চেষ্টায় সক্ষম হয়েছে। সংশয়বাদীরা মনে করেন যে তাসাউফের আদি মর্যাদা এবং উদ্দেশ্য বোধ হয় আর পূনর্বহাল করা যাবে না। তা যদি হয়ও, তবুও সাধারণ মুসলমানকে ফেরকাভিত্তিক বিভাজন থেকে উদ্ধার করার কাজ থেকেই যায়। তাই পাঠককে সেই সকল দুষ্টচক্রগুলি চিহ্নিত করার কাজে আহ্বান জানানো হচ্ছে যেগুলি আজ মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী। ইসলামের ছাত্র হিসাবে বর্তমান লেখক এই পুস্তকে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য একত্রিত করার সামান্য চেষ্টা করেছেন, যেন আরও সজাগ এবং যোগ্য মুসলমানেরা এগিয়ে এসে বিষয়টি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করতে পারেন। ওয়াল্লাহুল মুসতা’আন! আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী!