সুফিয়া কামাল বাংলাদেশে, শুধু বাংলাদেশে কেন, তার বহু আগে থেকে, সেই তার ১৪ বছর বয়স থেকে এ দেশের প্রতিটি সংগ্রাম, আন্দোলন, মুক্তির যুদ্ধে সেই মানুষের জীবন পাবার শর্তকেই বাঁচার নীতি হিসেবে স্থির করে নিয়েছিলেন। কোনো বিশেষ বাস্তবতা তাঁকে ঠেলে দিতে পারেনি আপোসকামিতার দিকে, বরং তাঁর নিজের মনুষতের শর্ত দিয়েই তিনি নির্মাণ করেছেন তাঁর বাস্তবতা। বালিকা বয়সে মা হয়েছেন, বরণ করতে হয়েছে বাল্য-বৈধব্য, শুধু সাহিত্য রচনা করতে চেয়েছেন বলে কপর্দকহীন অবস্থায় নওয়াববাড়ির ঐশ্বর্য হেলায় ত্যাগ করে বাস্তহারা হয়ে পাড়ি জমাতে হয়েছিল বরিশালের ছোট্ট, আরাম-আয়েশে ঘেরা শায়েস্তাবাদ মৌজা থেকে: বিশাল-বিরাট কলকাতায়। অসীম সাহসে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই কলকাতা করপোরেশন স্কুলে চাকরি নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, মা ও শিশু কন্যার সব দায়িত্ব পালনের ভার নিয়েছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলনে নিজেকে, নিয়োজিত করেছেন কোনোরকম বাধাবন্ধ না মেনে। নারীমুক্তির মধ্যদিয়ে মানবমুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন এবং তার জন্য কাজ করেছেন। পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, গড়ে তুলেছেন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিশু সংগঠন। শত অপমান ও নিপীড়নেও পিছপা হননি, ভুলে যাননি বিদ্রোহ আর প্রতিবাদের কথা। আইয়ুব খানের মুখের ওপর তার। বলতে একটুও গলা কাঁপেনি যে, যাদের জানোয়ার বলছেন। আপনিই সেই জানোয়ারদের প্রেসিডেন্ট। কাজ করেছেন সওগাত সম্পাদক নাসিরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে। ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। এ সবই সুফিয়া কামালের জীবনের বাস্তবতা- কিন্তু এ বাস্তবতা তাঁকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, নীতির বিরুদ্ধে, বিবেকের বিরুদ্ধে কিছু গ্রহণ করতে পারেননি।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।