কবি কাজী নজরুল ইসলামের গদ্য-পদ্য রচনায় যা সাধারণভাবে মুখ্য হয়ে উঠেছে, এমনকি তাঁর জীবনযাত্রায়ও যা প্রাধান্য পেয়েছিল তা হল ‘অতৃপ্তি’। তৃপ্তি নেই কিছুতেই, স্বস্তি নেই কোথাও। না-পাওয়ার ক্ষোভ, পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা, প্রাপ্তির পরও স্বরূপে তাকে উপলব্ধির অসমর্থজাত অস্বস্তি যেন কবি ও ব্যক্তি নজরুল ইসলামের গোটা জীবনের ভাব-চিন্তা, কর্ম--আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ অতৃপ্তির উৎস কি তা না জানলে, এর মূলীভূত কারণ আবিষ্কৃত না হলে কেবল কাব্যের আক্ষরিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এর কূল-কিনারা পাওয়া যাবে না। কোনো ঋজু একক কারণে প্রায় কিছুই ঘটে না; তাই কারণ বলতে কারণ-পরস্পরা বুঝতে হবে; এবং এস-কারণ সন্ধান কিংবা আবিষ্কারও কোনো একহারা বিদ্যার কাজ নয়। দেশকালের পরিমণ্ডলে থাকে নানা জটিল কারণ-ক্রিয়ার ঘাত-প্রতিঘাত। এখানে কবি নজরুলের মনোজগৎ বিশ্লেষণ করা হয়েছে তারই জীবনের নানা ঘটনা ও তৎসময়ের বাস্তবতার নিরিখে। পাঠক সমালোচকদের চোখে নজরুলের সাহিত্য বিশ্লেষিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক মতাদর্শ আলোচিত হয়েছে। নজরুল ইসলামের কবি স্বভাবে শক্তিপূজার প্রসঙ্গ এবং প্রেম-তৃষ্ণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নজরুলের কবিভাষায় পুরাণ ও প্রকৃতি বিষয়টা কেমন তা আলোচনা হয়েছে। পরিশিষ্টে নজরুল গ্রন্থপঞ্জী ও নজরুল-বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলির তালিকা সংযোজিত হয়েছে। সব মিলিয়ে কবি নজরুল-প্রেমি এবং নজরুল-গবেষকদের জন্য বইটি একটি আকর-গ্রন্থ হিশেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার অনন্য ব্যক্তিত্ব এবং মধ্যযুগের সাহিত্য ও ইতিহাসের বিদগ্ধ পণ্ডিত ড. আহমদ শরীফ পঞ্চাশ দশক থেকে নিয়মিতভাবে প্ৰবন্ধ লেখা শুরু করেছিলেন এবং তা তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলমান ছিল। ড. আহমদ শরীফ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে উপেক্ষা করা যায় তবে কোনো অবস্থাতেই তাঁর বিশাল কীর্তি অস্বীকার করা যায় না । নিজস্ব দর্শন চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে বোদ্ধা সমাজের কাছে তিনি ছিলেন বহুল আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও এ ধারা বহমান। ভাববাদ মানবতাবাদ ও মার্কসবাদের যৌগিক ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণে, বক্তব্য ও লেখনীতে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে পাহাড়সম গবেষণাকর্ম, সহস্রাধিক প্ৰবন্ধ তাকে কিংবদন্তী পণ্ডিত হিশেবে উভয় বঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১; গ্রাম সুচক্রদণ্ডী, উপজেলা পটিয়া, জেলা চট্টগ্রাম। পিতা আব্দুল আজিজ, মাতা সিরাজ খাতুন। প্রথম স্কুল চট্টগ্রাম শহরের আলকরণ মিউনিসিপ্যাল প্ৰাথমিক বিদ্যালয়। প্রবেশিকা পাশ করেন পটিয়া হাই স্কুল থেকে, আর আইএ, এবং বিএ পাশ করেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে, এবং এমএ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১৯৬৭ সালে ডক্টরেট উপাধি লাভ, বিষয়: সৈয়দ সুলতান, তার যুগ ও গ্রন্থাবলী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক । মৃত্যু ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ ৷৷