স্কুলভ্যানটা বাসার সামনে থামতেই লাফ দিয়ে নামল মুনিয়া। সদরগেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল দৌড়ে। তারপর বলতে গেলে লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি টপকে উঠে এল চারতলায়। তড়িঘড়ি ডোরবেল বাজাল। মেয়ের স্কুল থেকে ফেরার প্রতীক্ষায় মা-তো ভেতরে প্রস্তুতই ছিলেন, খুলে দিলেন দরজা। ফিক্ করে হেসে দিয়ে স্কুল ব্যাগটা প্রথমে ধরিয়ে দিল মায়ের হাতে। তারপর মায়ের আঁচলের তলা দিয়ে ফুডুৎ করে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ল মুনিয়া। মা একটু হাসলেন। পাগলি মেয়ে! স্কুলে বসেও ভাবে পোষা ময়না পাখিটার কথা।br সুযোগ পেলেই মোবাইলে কথা বলতে চায় ময়নাপাখিটার সঙ্গে। মা বা গৃহকর্মী মহিলাকে মোবাইল সেট ধরতে হয় ময়নাটির মুখ আর কানের কাছে। লাউড স্পীকারে দু'জনের কথা শুনে মা ও বৃদ্ধা গৃহকর্মী, কী যে মজা পায়! তবুও স্কুল থেকে ফিরে প্রথমেই দৌড়ে যাবে ময়নাপাখির কাছে। ময়নাটা যেন জীবন ওর। জীবনের বন্ধু। মুনিয়া এক দৌড়ে চলে এল পেছনের বারান্দায়, চিৎকার দিল, 'ময়না! ময়না! আমার ময়না সোনা!'br কিন্তু রোজকার মতো আজ আর সাড়া দিল না ময়নাটা। মুনিয়ার ডাক শুনলেই ময়নাটা খুশিভরা গদগদ কণ্ঠে জবাব দেয় সব সময়, 'ময়না! ময়না! আমার ময়না সোনা! মুনিয়া! মুনিয়া! সোনার মুনিয়া!' আবারো চেঁচালো মুনিয়া। সাড়া নেই। খাঁচার দিকে ভালো করে তাকাতেই শূন্য খাঁচা দেখে কেঁপে গেল মুনিয়ার বুক।
শরীফ খান। জন্ম : ৭ এপ্রিল, ১৯৫৩, গ্রাম : সাতশৈয়া, উপজেলা, ফকিরহাট, জেলা : বাগেরহাট। পিতা : খসরু আলী খান । মা : হাশেনা খাতুন। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। গল্প-উপন্যাস-স্মৃতিকথা-প্রবন্ধ-ফিচার-ভ্রমণকাহিনী সবকিছুই লিখছেন । শিশু সাহিত্যের সাতরঙা জগতেও তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। বাংলাদেশের কীর্তিমান পক্ষী ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পাখি ও বন্যাপ্রাণী আচরণবিদ শরীফ খানের দীর্ঘ গবেষণার ফল ‘হালতি পাখির বাসা’ ও ‘বড় হালতির ছানা শীর্ষক দুটি প্রামাণ্য ভিডিও চলচ্চিত্র; এই দুটি পাখির বাসা-ডিম-ছানাসহ সব তথ্য-উপাত্ত এদেশে একমাত্র তারই কজায়।। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রকাশিত ৮ খণ্ডের শিশু বিশ্বকোষের অন্যতম প্রদায়ক। এশিয়াটিক সােসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ১০ খণ্ডের বাংলাপিডিয়ারও তিনি অন্যতম প্রদায়ক । পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আই,ইউ,সি,এন কর্তৃক প্রকাশিত পাখি ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক Red data book প্রস্তুতেও তিনি অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। পুরস্কার : জাতীয় পর্যায়ে অগ্রণী ব্যাংক শিশু-সাহিত্য পুরস্কার, কবি কাদের নেওয়াজ স্মৃতি স্বর্ণপদক, কণ্ঠস্বর স্বর্ণপদক, বাগেরহাট।