"বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সংঘটিত গেরিলা যুদ্ধ থেকে বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ ছিল ভিন্নতর। যারা এই যুদ্ধে গেরিলা হিসেবে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, তাদের একটা বড় অংশ ছিল রাজনৈতিক সচেতন শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূহের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী। ২৫শে মার্চের আগে এদের অনেকেই ছিলেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্র। আবার অনেকেই সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে বেরিয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশের মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষাদীক্ষায় এত উন্নতমানের গেরিলা দেখা যায়নি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে এক অসম লড়াই, এ অবতীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ হাই কমান্ড গেরিলা তৎপরতার উপর বিশেষ জোর দেয়। যােগাযােগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে হানাদার বাহিনীর মনােবল ভেঙে একটা আতংক সৃষ্টি করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের গেরিলারা এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যে সাহস, ক্ষিপ্রতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে তা অনাগত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বংশধরদের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই। চীনের মাওসেতুং অথবা কিউবার চেগুয়েভারার গেরিলাদের চেয়ে বাঙালী গেরিলারা কোন অংশেই কম ছিলেন না। গেরিলা যুদ্ধে যে অভাবিত সাফল্য অর্জিত হয়েছিল তা দুটো কারণে সম্ভব হয়েছিল- এক, দেশের অভ্যন্তরে সাত কোটি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন- যারা আশ্রয়, আহার ও খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। দ্বিতীয়, উন্নতমানের গেরিলাদের অংশ গ্রহণ যারা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ এবং যে কোন পরিস্থিতি মােকাবিলা করে প্রাণ বিসর্জন দিতে সদাপ্রস্তত। নয় মাসের যুদ্ধে ২৩১টি ব্রীজ, ১২২টি রেলওয়ে লাইন, ৯০টি ইলেকট্রিক স্টেশন ধ্বংস ও অসংখ্য হঠাৎ আক্রমণ চালানাে হয়। উচ্চমানের আত্মনিবেদন ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব ছিলাে না। বইটিতে এমনই বিভিন্ন গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে।
মেজর রফিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে অনার্স ও এম এস সি পাশ করে কিছুদিনের জন্য তিনি অধ্যাপনা করেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ আরম্ভ হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন এবযুদ্ধ চলাকালে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট কমিশন লাভ করেন। ১৯৮১ সালের নভেম্বর মাসে লেখ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর প্রাপ্ত হন।