“প্লেটো: মেনো-সদ্গুণ শিক্ষাদানযোগ্যতা সম্পর্কে একটি সংলাপ" বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ মেনো সংলাপটি প্লেটোর জ্ঞানতত্ত্বের একটি মূল রচনা। জ্ঞান যে অনুস্মরণ (Recollection), সেই বক্তব্য আমরা এই সংলাপটিতেই প্রথম খুঁজে পাই। জ্ঞান মানুষের সহজাত, অন্তর্গত গুণ ও বৈশিষ্ট্য; মানুষের জন্মের পূর্বেই তা তার আত্মায় সুপ্ত অবস্থায় থাকে; তাকে শুধু জাগ্রত করতে হয়, এমনই ধারণা অনুস্মরণতত্ত্বের। যেমন, ফিদো-তেও প্লেটো সক্রেটিসের জবানিতে বলেন যে, “আর এটি যদি সত্য হয় আমাদের জন্মের পূর্বে আমরা জ্ঞান অর্জন করি, তাহলে জন্মের মুহূর্তে তা হারিয়ে ফেলি, আর পরবর্তী পর্যায়ে ইন্দ্রিয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের সেই পূর্বলব্ধ জ্ঞান পুনরুদ্ধার করি, তাহলে আমার ধারণা, যাকে আমরা শিক্ষালাভ বলি, তা আমাদের নিজেদের জ্ঞানেরই পুনরুদ্ধার, আর তাকে যদি আমরা অনুস্মরণ হিসেবে অভিহিত করি … তবে ঠিকই করি।” এই ধারণা প্লেটোর জ্ঞানতত্ত্বে গভীর এবং প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সক্রেটিস জ্ঞান ও অভিমতের মধ্যে পার্থক্য করেন। জ্ঞান হল প্রত্যক্ষপূর্ব জিনিস, তা ইন্দ্রিয়নির্ভর নয়, তা বুদ্ধিজাত; আর অভিমত হল ইন্দ্রিয়জাত, প্রত্যক্ষণনির্ভর। এই সংলাপটিতে অনুস্মরণ, অভিমত আর জ্ঞান নিয়ে প্লেটো যে উপমা তুলে ধরেন তা তাঁর জ্ঞানতত্ত্বের ভিত্তি হয়ে উঠেছে; এই ভিত্তিকে এখনও প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। সক্রেটিস মেনোকে বলেন: “সত্য মতামত ভালো জিনিস; যতক্ষণ তারা তাদের অবস্থানে বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ সব ধরনের ভালো কাজ করে; কিন্তু তারা দীর্ঘ সময় ধরে তা থাকে না। তারা মানুষের মন থেকে পালিয়ে যায়, তাই যুক্তি দিয়ে তাদের বেঁধে না দিলে তারা খুব একটা মূল্যবান কিছু হয়ে ওঠে না। প্রিয়বর মেনো, আমরা পূর্বে যে-ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম, সেই প্রক্রিয়াটি হল অনুস্মরণ। একবার যদি তাদের বেঁধে ফেলা হয় তবে তারা জ্ঞান হয়ে ওঠে, আর সুস্থিত হয়। সেজন্যই জ্ঞান এমন জিনিস যা সঠিক মতামতের চাইতে মূল্যবান। একটি থেকে আরেকটির পার্থক্য হল বাঁধন।”
Title
প্লেটো: মেনো-সদ্গুণ শিক্ষাদানযোগ্যতা সম্পর্কে একটি সংলাপ
১৯৫৩ সালের ১ লা অক্টোবর নরসিংদি জেলার বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে নীতি বিশ্লেষণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের সচিব পদ থেকে অবসর লাভ করেন (সর্বশেষ দায়িত্ব পালন-বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ম্যানিলা)। তাঁর আগ্রহের বিষয় বিজ্ঞানের দর্শন ও তুলনামূলক মিথলজি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত পুস্তুক : প্লেটোর রিপাবলিক-এর ভূমিকা; রবীন্দ্রনাথ : কার্ল পপারের নির্বাচিত দার্শনিক রচনা; প্লেটোর আইনকানুন; রিপাবলিক, সিম্পেজিয়াম, রাষ্ট্রনায়কসহ প্লেটোর ১৭টি সংলাপের অনুবাদ এবং দর্শনের আরো কিছু ধ্রুপদী গ্রন্থ।