"সেরা গোয়েন্দা গল্প" বইয়ের কিছু কথা: বাংলা গােয়েন্দাকাহিনীর সূত্রপাত উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে। এর আগে অবশ্য বটতলার কিছু কিছু বইয়ে অপরাধকাহিনী স্থান পেয়েছিল। কিন্তু সেখানে গােয়েন্দা বা রহস্যভেদের ব্যাপারটা ঠিক ছিল না। বাংলা গােয়েন্দাসাহিত্যের সূচনা সম্পর্কিত আলােচনায় যে বইটির কথা অনেক লেখকই উল্লেখ করেছেন - সেটি হল প্রিয়নাথ মুখােপাধ্যায়ের ‘দারােগার দপ্তর'। দারােগার দপ্তর প্রকাশিত হয়েছিল আজ থেকে একশাে বছরেরও বেশী আগে, ১৮৯২ সালে । প্রিয়নাথবাবু নিজে ছিলেন পুলিশের ডিটেকটিভ বিভাগের কর্মচারী, সুতরাং ক্রাইম ও ডিটেকশনের ব্যাপারে ওঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল। তারই ভিত্তিতে পুলিশী বিবরণমূলক নানান কাহিনী উনি লিখেছিলেন। কিন্তু ওঁর লেখায় পরিপূর্ণ সাহিত্যগুণ খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলা গােয়েন্দা-গল্প খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলাে। ১৮৯৪ সাল থেকে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত ডিটেকটিভ গল্পের সংকলন ‘গােয়েন্দা কাহিনী’ সাময়িকপত্রের মত মনিহারী দোকানে ও রাস্তায় ফর্মা হিসেবে বিক্রি হত। ১৮৯৬ সালের একটি বিজ্ঞাপন অনুসারে ‘গােয়েন্দা কাহিনী’-র পাঁচ লক্ষ ফর্মা এর মধ্যেই নাকি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল! বিভিন্ন লেখক এই গােয়েন্দা কাহিনীতে গল্প লিখতেন – তাঁদের মধ্যে মণীন্দ্রনাথ বসু (রাজনারায়ণ বসুর পুত্র), শরৎচন্দ্র সরকার, প্রমুখ ছিলেন। আধুনিক প্রজন্মে ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত জন্ম দিলেন কীরিটি আর সুব্রতকে। আর বাংলাদেশে একচেটিয়া জায়গা দখল করলাে শ্রদ্ধেয় লেখক রকিব হাসানের তিন কিশাের গােয়েন্দা- কিশাের, মুসা আর রবিন। এখনও ‘তিন গােয়েন্দা’র বই পড়লে যেন ফিরে যাই কৈশােরের উত্তাল দিনগুলােতে। ধন্যবাদ রকিব হাসানকে। গােয়েন্দা কাহিনীর প্রতি বাঙালি পাঠকপ্রিয়তা সৃষ্টির অনন্য কারিগর হিসেবে রকিব হাসান ও সেবা প্রকাশনীর নাম চির ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই বইতে নামকরা কিছু গােয়েন্দা গল্পকে স্থান দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গল্পের কাঠামাে, কাহিনীবিন্যাস এবং রহস্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে আশা করা যায়, গল্পগুলাে নিঃসন্দেহে পাঠকপ্রিয়তা পাবে।