"টিপু সুলতানের দেশে" বইটির 'আমার কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করতে আমার বড় ভাল লাগে। কোনাে নতুন জায়গায় গেলে সে দেশের ইতিহাস হতে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের চরিত্র ইত্যাদি সম্বন্ধে যে অভিজ্ঞতা অর্জন হয়, তা অনেক বছর বই পড়েও হয় না। তাছাড়া, নতুন দেশ দেখবার বা বিভিন্ন অঞ্চল দেখবার আনন্দই অন্যরকম। তবে আমার ভ্রমণে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলাে দেখবার সূচিই প্রাধান্য পায়। আমার এ প্রয়াসও তার বাইরে নয়। আমি মনে করি, একটি দেশের ইতিহাস বর্তমানের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে সে ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ছোঁয়া থাকতে হবে বর্তমানের সাথে অতীত বিবর্জিত যেমন সমাজ ও জাতি হতে পারে না, তেমনি ইতিহাস ব্যতীত কোনাে জাতি হতে পারে না। আমার এ প্রয়াস একদার হিন্দুস্থান ও বর্তমান ভারতের দক্ষিণাংশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থাপনা এবং বর্তমানের প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসের নাম ‘টিপু সুলতানের দেশে। আমার তঙ্কালীন দাক্ষিণাত্য বিশেষ করে মাইসুর ভ্রমণ ছিল দাক্ষিণাত্যের আট শত বছরের মুসলিম শাসনামল, তার পূর্বে চালুক্যদের শাসনকালের কিছু স্মৃতি দর্শনের। বিশেষ করে উপমহাদেশ তথা ব্রিটিশ ইতিহাসে বিভিন্নভাবে চর্চিত টিপু সুলতানের দুর্গ শহর ও রাজধানী শ্রীরাঙ্গাপটনম বা শ্রীরাঙ্গপাটনা দেখতে গিয়েছি। দেখেছিলাম ওই জায়গা যেখানে মাইসুরের ব্যাঘ্র-টিপু সুলতান স্বাধীনতার জন্য মরণপণ যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। দেখেছি টিপু সুলতান ও তাঁর পিতা হায়দার আলীর সমাধি, যে সমাধি এখন আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে রূপধারণ করেছে। আমার দেখা মতে, উপমহাদেশের মধ্যযুগ হতে হালের ইতিহাসে কোনাে শাসকই মৃত্যুর পর আধ্যাত্মিকভাবে সমাদৃত হননি যেমনটা টিপু সুলতানের সমাধিতে দেখেছি। সে এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা।
Brigedier J.M. Sakaoat Hosen Ret. ১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।