প্রথম ফ্ল্যাপ পৃথিবীর অনেক সমৃদ্ধ দেশ ও জাতির চেয়ে এদেশের সৃজনশীল জ্ঞান চর্চার ঐতিহ্য বা ফোকলোর বৈচিত্র্যপূর্ণ। সে তুলনায় এদেশের ফোকলোর চর্চার সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা খুবই বিরল। সে অভাববোধ থেকেই বাংলাদেশের ফোকলোর শীর্ষক গ্রন্থটি প্রণীত হলো। এতে প্রধানত বাংলাদেশের ফোকলোরের অন্তর্ভুক্ত, গবেষণায় উপেক্ষিত বিষয়াবলী সম্পর্কে আলোচনা স্থান দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশক্ষেত্রে এদেশের ফোকলোর ভুবনের প্রাণবন্ত চর্চাকারী শিশু-কিশোরদের সৃষ্টিশীল তৎপরতার নানাবিধ বিষয় উপেক্ষিত রয়ে গেছে, এ-গ্রন্থে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের ফোকলোর সংশ্লিষ্টতার অনন্য দৃষ্টান্ত লোকছড়া ও লোকক্রীড়ার বিচিত্র বিষয় এবং তার সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের ফোকলোর চর্চায় আরেকটি উপেক্ষিত বিষয় নারীর ফোকলোর চর্চা, এই গ্রন্থে নারীর ফোকলোর চর্চার বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে নকশিকাঁথা, মেয়েলীগীত, বিবাহ সংস্কৃতি ও উৎসব সম্পর্কে কিছু বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ফোকলোরের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় ধারা এবং অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত বিষয় পাটচিত্র-পটগান, পুথি-সংস্কৃতি, লোকধাঁধা, লোকবিশ্বাস-সংস্কার, প্রবাদ-প্রবচন নিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ এবং পরিশেষে বাংলাদেশের দুইজন খ্যাতিমান ফোকলোর-সাধকের জীবন ও কর্ম বিষয়ক আলোচনা সংকলিত হয়েছে। বাংলাদেশের ফোকলোর শীর্ষক গ্রন্থটি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে; এছাড়া, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকল্যাণ বিভাগ; এমনকি বাংলা, নাট্যকলা, সংগীত ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসহায়ক হিসেবে কাজে আসবে বলে আমাদের ধারণা।
দ্বিতীয় ফ্ল্যাপ নাজমীন মর্তুজা বাংলাদেশের লোকায়ত দর্শন তাড়িত গবেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক। সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণায় নিবেদিত। মূলত সাহিত্য ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির গবেষণায় ইতোমধ্যে তিনি যথেষ্ট নিষ্ঠার স্বাক্ষর রেখেছেন। যৌথভাবে রচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের অলিখিত ইতিহাস, ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ আত্তীকরণ ও পরিবেশন-পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। এছাড়া, বাংলা পুথি সাহিত্য নামে একক ভূমিকা ও সম্পাদনায় সংকলন করেছেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মুহম্মদ এনামুল হক প্রমুখ গবেষকের পুথি-সাহিত্য সম্পর্কিত প্রবন্ধমালা। প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থ গুরুপরম্পরা (২০১০), শ্রীরাধার উক্তি (২০১১), মহামায়া কঙ্কাবতী (২০১৩); উপন্যাস নোনাজলের চোরাবালি (২০০৮)। তিনি ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ আত্তীকরণ ও পরিবেশন-পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য অর্জন করেছেন সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমীর যৌথ আয়োজনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে ফোকলোর বিষয়ে প্রধান আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি ভাবনগর ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক। জন্ম : ১৫ মার্চ ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ।
নাজমীন মর্তুজা, ঐতিহ্য সচেতন কবি, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক। কবিতা রচনার স্বকীয়তায় তিনি যেমন মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, তেমনি কথাসাহিত্য ও গবেষণাকর্মে অনন্য অভিজ্ঞতার প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ : গুরুপরম্পরা, শ্রীরাধার উক্তি, মহামায়া কঙ্কাবতী, বাস্তবের লুকোচুরি; উপন্যাস : নোনাজলের চোরাবালি; গবেষণাগ্রন্থ : ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে 'বিষাদ-সিন্ধু' আত্তীকরণ ও পরিবেশন-পদ্ধতি, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, বাংলাদেশের ফোকলোর, সাইদুর রহমান বয়াতি : সাধকের স্বদেশ ও সমগ্র, বাংলা পুথি সাহিত্য। তিনি গবেষণাকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অর্জন করেছেন সিটি-আনন্দ আলো পুরস্কার ২০১২। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকউৎসবে। তিনি ভাবনগর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ভাবনগর আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। বর্তমানে স্বামী-সন্তানসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। জন্ম : ১৫ মার্চ ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ।