কিছু বাস্তব এবং কিছু মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার ভেতর দিয়ে চলতে থাকে মানুষ । এভাবেই চলতে চলতে একসময় সমাজদর্পণে নিজেকে খুঁজে পায় । জীবন বাস্তবতার এই পর্যবেক্ষণ আর সরলরৈখিক কোন দর্শন থাকে না । বরঞ্চ বহুমাত্রিক নিরীক্ষায় একদিন নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে মানুষ পেয়ে যায় তার আদর্শকে । যেখানে বহুমাত্রিক এবং বিপরীতধর্মী রংয়ের সংমিশ্রণে জীবন হয়ে উঠে মূর্তিমান । অস্তিত্ব সঙ্কটের পৃথিবীতে প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামী সাধারণ মানুষগুলো মৃত্যুকে কেবল দেখে না, চিনেও নেয় এবং উপলব্ধি করতে শেখে জীবন ও মৃত্যুর সমান্তরাল সহচলন । ‘মৃত ও জীবিতের জীবনগুলি’তে প্রতিটি মানুষ তাই খুঁজে পায় নিজেকে, যেন প্রতিটি গল্প একেকটি ছোট ছোট আয়না, যে আয়না কথা বলতে পারে । ‘পরম্পরা’, ‘ফেরা’, ‘থুতু’ গল্পগুলোর মর্মস্পর্শী নিবেদন সমাজকে খিঞ্চে ধরে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় । অন্যদিকে ‘মার্বেল জীবন’, ‘পৌরাণিক গল্প’ অথবা ‘দেয়ালবন্ধু’ পাঠককে নিয়ে আসে সম্পূর্ণ নতুন পৃথিবীতে, যেখানে লেখকের থেকে দূরে বসে অনুভূতিরা গল্প বলে চলে । বইটি নিয়ে লেখক বলেন, ‘মৃত ও জীবিতের জীবনগুলি’ নামগল্প থেকে বইয়ের শিরোনাম নেয়া হলেও প্রতিটি গল্পের একটায় সুর- মানবীয় সম্পর্ক তথা জীবনকে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা । আধুনিক সময়ের একটি প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে নিজেকে চিনতে না পারা । এখানে মানুষের সবকিছুই আছে কিন্তু কিছুই যেন নেই, এমনই এক দ্বৈততা থেকে মানুষের মানসিক মৃত্যু প্রবল হয়ে উঠছে দিনকে দিন । ‘মৃত ও জীবিতের জীবনগুলি’ মূলত মানুষের মানসিক মৃত্যুরই ইঙ্গিত দেয় ।