গ্রন্থ পরিচিতিঃ অকপটে নিজেকে বিশ্লেষণ করে তাকে সবার কাছে তুলে ধরার অমোঘ আকাঙ্ক্ষা সবার থাকে না। মাঝে মাঝে যদিও বা বিশ্লেষণের খেয়াল তাড়া করে, তবু তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে পারাই জীবনের ভোগ সুখের সংজ্ঞা কারো কাছে। কিন্তু একে দিনের আলোর মত ছড়িয়ে দিয়ে জীবনকে অবমুক্ত করার চেতনাই মানুষকে কবি করে তোলে কিংবা এমন চেতনার মানুষই বুঝি কবি হন! কবি হয়ত মানুষ নন, কেননা, মানুষের তো লুকোনোর দায় থেকে যায়। কবি শামীম আহমেদ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “একফোঁটা বৃষ্টি হতে যদি’র পাতায় পাতায় দেখিয়েছেন পাপ-পূণ্যের বাইরেও জীবনের নিজস্ব গতি ও খেয়াল আছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থের যৌবনের অপরিমিতিবোধকে ছাড়িয়ে গিয়ে মানুষের জীবনবোধের নানাবিধ প্রহেলিকাকে আশ্রয় করেছেন দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে প্রহর কুয়াশার কাছে ঋণী’র বিষয়বস্তু হিসেবে। কিছুটা ছন্নছাড়া অসংকোচের কবি শামীম আহমেদ বরাবরের মতোই তাই দুর্বিনীত থেকেছেন ভাব প্রকাশে।
কবি পরিচিতিঃ বাস্তব-অবাস্তবের মিথস্ক্রিয়া, সমাজের আপাতঃ দোদুল্যমানতা কবির কাব্যচিন্তাকে করেছে দৈনন্দিন জীবনের রূপকথা। সরকারি কর্মকর্তা বাবার কল্যাণে কৈশোরেই পরিচিতি অনেক বৈচিত্র্যময় মানুষ আর ভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার সাথে। সেই সুবাদে সমাজ ও ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণে তাঁর এ অনন্য যোগ্যতা অর্জন। ভিন্ন জীবনদর্শন, রূঢ় বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ইতিবৃত্তগুলোকে এক সুতোয় কত সহজে গেঁথে ফেলা যায় তা তাঁর শক্তিশালী লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রতিভাত হয়েছে। পেশাগত জীবনে একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ কবি শামীম আহমেদ মনে করেন পৃথিবীতে কোন সুখী কবি নেই; তাই পৃথিবীতে কখনও কোন সুখের কবিতাও রচিত হয়নি। বিরহের কবি শামীম আহমেদ তাই সুখ খোঁজেন দুঃখের পংক্তিমালায়।
জন্ম, মৃত্যু, স্থান, কালের ব্যাপ্তিতে জীবনকে বাধতে চান না। মনে করেন সময়ের সাথে জীবনের উপলব্ধির পরিভ্রমণ ঘটে। চলতে থাকা পথে দিকভ্রান্ত কবি ঠাহর করতে পারেন না বাস্তব-অবাস্তবের ভিন্নতা, তাই সুখ খুজে ফেরেন দুঃখের পংক্তিমালায়।