জাল থেকে জালে জলনির্ভর প্রান্তিক জনজীবনের উপাখ্যান। বাঙালির জীবন আর সংস্কৃতির সঙ্গে যেমন মাছ, তেমনি জেলেজীবনও বাঙালি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির অপরিহার্য আহার্য, মাছের জন্য বাঙালি। মূলত জেলেদের উপরই নির্ভরশীল । এদেশের জেলেরা নদী, খাল, বিল আর প্রাকৃতিক জলাশয়ের উপর নির্ভর করেই তাদের সনাতন জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখনও সংগ্রামরত । কিন্তু নদী-খাল-বিল আর অন্যসব প্রাকৃতিক জলাশয়ের মতোই তাদের জীবন আজ সঙ্কটাপন্ন । এই সঙ্কট যতটা না প্রাকৃতিক, তার চাইতে বেশি রাজনৈতিক । মানুষের বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক অবলম্বনসমূহ কীভাবে তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে আর কোন রাজনৈতিক কারণে তারা বেঁচে থাকার অধিকার হারাচ্ছে- জাল থেকে জালে উপন্যাস তারই নিরাবেগ ও বস্তুনিষ্ঠ বয়ান । এই উপন্যাসে জেলে জীবনের অতীত আর তাদের সংস্কৃতি নয়, নতুন পুঁজি আর ক্ষমতা কী কৌশলে নতুন শোষণের জালে আটকে প্রান্তিক জনপদের সনাতন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে সে বিবরণের পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষের সমাজ থেকে উঠে আসা নেতৃত্বও যে শ্রেণিগত অবস্থান পরিবর্তনের ফলে সমাজস্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে লেখক সেদিকটি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। জেলেজীবন নিয়ে গল্প-উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন নয় । তবু জাল থেকে জালে উপন্যাসকে এক নতুন গল্প বলতে হবে । কারণ, এ গল্প কেবল কোনো ক্ষয়িষ্ণ জেলে জীবনের চিত্র নয়, এ উপন্যাসে লেখক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর শ্রেণিশোষণের বিচিত্র কৌশলসমূহ একই সঙ্গে বাস্তব আর শৈল্পিক চেতনায় উন্মোচিত করেছেন, যা প্রগতিশীল বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে । উপন্যাসটি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত সাহিত্য-সংস্কৃতির ত্রৈমাসিক পত্রিকা নতুন দিগন্ত-এ। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠক-প্রশংসিত হয়েছে ।
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর। জন্ম : ১৯৬৫। জন্মস্থান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দক্ষিণ তারুয়া। শৈশব গ্রামের ধুলােবালি-জলকাদায় ঋদ্ধ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : দক্ষিণ তারুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, ফিন্যান্স বিভাগ, ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের ইউনানী-আয়ুর্বেদ চিকিৎসাব্যবস্থার পলিসি পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ মৌলিক গবেষণাকর্ম হিসেবে প্রশংশিত হয়েছে।