ফ্ল্যাপে লিখা কথা রাজনৈতিক আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক দুটো পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। ১৯৪৭-১৯৭১ কালপর্বে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় প্রায় সর্বক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তৃত করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পাকিস্তানি শাসনকালে জাতিগত নিপীড়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির জাগরণের যে দিন এসেছিল তার মূলে ছিল সংস্কৃতি সচেতনতা। ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্রদর্শন যখন শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরাই। পূর্ব বাংলার রাজনীতি যখন ছিল সংশয়াপন্ন, তখন জাতির নিজস্ব অস্তিত্ব রাঙালি জাতিসত্তা খুঁজে নেয়ার সুবিপুল অন্তপ্রেরণা জন্ম দিয়েছিলেন তাঁরেই। বস্তুত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রেক্ষাপটে স্পষ্টতই প্রগতিশীল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আন্দোলনের পরিপূরক ও সহযোগী হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। তাই বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে সাংস্কৃতিক আন্দোলন যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এই সত্য উপলব্ধি করেই এই গবেষণা গ্রন্থটিতে বিভাগপূর্ব কাল থেকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রেরণার উৎস অনুসন্ধানপূর্বক ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগ্রামের উপাদান, গতি-প্রকৃতি আলোচিত হয়েছে। ইতিহাসের অনুসন্ধিৎসু পাঠক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা এ বই থেকে মূল্যবান তথ্য ও বিশ্লেষণ পেতে পারেন।
সূচিপত্র * বিভাগ-পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক আ্ন্দোলন : শেকড়ের সন্ধান * বাংলাদেশ : রাজনৈতিক যুগমানস (১৯৪৭-১৯৭১) * সাংস্কৃতিক আন্দোলন উপাদান * সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাংগঠনিক বিকাশ * রক্ষণশীল ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন * প্রগতিশীল ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন
ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ১৯৬৮ সালে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে বিএ (সম্মান), এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করছেন। বিশ্ববিদালয়ের ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গীতকর্মী ও সংগ্রঠক হিসেবে প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আদর্শগত প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়েই ড. ব্যানার্জী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিষয়ে গবেষণায় আত্মনিয়ােগ করেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটির বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক। সমীক্ষা প্রকল্প' (২০০৬)-এ তিনি বগুড়া জেলা সমন্বয়কারী ও গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন। করেছেন। বাংলাদেশের আদিবাসী, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে দেশ-বিদেশে তাঁর বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি রাজিব ব্যানার্জী নামে সমধিক পরিচিত।