বিশ্বের বড় বড় সাহিত্যিকরা শুধু যে বড়দের জন্য লিখেছেন তা-ই নয়, তারা ছোটদের জন্যও লিখেছেন অনেক মজার মজার গল্প-ছড়া। রুশ সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি। ছোটদের জন্য লেখা তার একটি গল্প ‘চড়–ইছানা’। গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন হায়াৎ মামুদ। আসলে বিশ্বসাহিত্যে এত সমৃদ্ধ গল্প, ছড়া, কবিতা, উপন্যাস রয়েছে, যা পড়তে হলে অনেক ভাষা জানতে হয়। কিন্তু সবার পক্ষে তো আর এত ভাষা জানা সম্ভব নয়। তাই যত বেশি বাংলা ভাষার এসব সাহিত্যের অনুবাদ হবে তত বেশি আমরা এসব পাঠ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারব। চড়–ইপাখি আমাদের অতিপরিচিত। শহরে কিংবা গ্রামে এই পাখিটির দেখা মেলে। সাধারণত মানুষের ঘরবাড়িতেই এদের বসবাস বেশি। বিশেষ করে বারান্দা, ভেন্টিলেটারের মধ্যে এরা ছোট ছোট বাসা বেঁধে থাকে। সারাদিন এরা ফুরুতফারুত ওড়ে এবং কিচিরমিচির করে ডাকে। চড়–ই পাখি আকারে অনেক ছোট এবং পালকের রং ধূসর। নানা রকম খাবার খেয়ে এরা জীবন ধারণ করে। বাংলা ভাষায়ও এ পাখিটি নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প ও ছাড়া। ম্যাক্সিম গোর্কির ‘চড়–ইছানা’ গল্পটি অনুবাদক হায়াৎ মামুদ এতই সুন্দরভাবে অনুবাদ করেছেন যে, এটা পাঠ করলে আর অনুবাদের মতো মনে হবে না। একজন ভিন্ন ভাষার সাহিত্যিকের রচনা যখন অনুবাদ করা হয় তখন সেটা যে ভাষায় অনুবাদ করা হয় ঠিক সেই ভাষার এবং সেই পরিবেশের সাথে যদি মিলে যায় তবেই সেই অনুবাদ হয় হৃদয়গ্রাহী। এই গল্পের চড়–ইছানার নাম পুদিক। নামটি শুনে একটু অবাক হতে হয়, কারণ এটি রুশ ভাষার একটি নাম। অনুবাদক নামটি যেমন ছিল তেমনই রেখেছেন। পুদিকের বাবা-মা গাছের ওপরে বানানো ঘরে তাকে রাখে। ওকে পোকা ধরে এনে খেতে দেয়। আর নানা রকম উপদেশ দেয়। সাবধানে থাকতে বলে। যেন বিড়াল এসে ওকে ধরে না নিয়ে যায়। পুদিক মানুষ দেখে ভাবে, ওদের মতো কেন ডানা নেই মানুষের! পুদিক বলে, সে যখন বড় হবে তখন সে সবার ডানা বানিয়ে দেবে। এ রকম নানা ভাবনা আর মজার ঘটনা আছে এই গল্পে। পুদিকের নিজের বানানো ছড়া পড়লেই এই গল্পের বইটি পেতে আরো উদগ্রীব হয়ে উঠবে সবাই। পুদিকের ছড়া― এই বুড়ো তুই পাখনা ছাড়া দুই ঠ্যাংয়েতে কোথা যাস― হলিই বা রে দত্যিপারা মশার কুটুস্ ঠিকই খাস। এট্টুখানি আমি ভাই, কিন্তু মশা ধরে নাই।
(মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) বিখ্যাত রুশ সাহিত্যক। তিনি নিজেই তার সাহিত্যক ছদ্মনাম হেসেবে বেছে নেন 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে মা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রথম জীবন মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহ ত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমন করেন। তিনি ১৮ জুন ১৯৩৬ (৬৮ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন।