ছড়ায় ছড়ায় আলোকিত এখন বাংলা শিশুসাহিত্যভুবন। ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে...’ এ-জাতীয় ছড়া কার না ভালো লাগে! ছড়া পড়তে ভালোবাসে ছোট-বড় সবাই। শিশুদের পাঠের হাতেখড়ি এই ছড়া দিয়ে। আধুনিক ছড়াসাহিত্যের পথিকৃৎ দক্ষিণারঞ্জন মিত্র-মজুমদার। তারপর কালের বিবর্তনের সঙ্গে ছড়াসাহিত্য সৃষ্টিশীলতার পথ বেয়ে অনেক দূর এগিয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশের ছড়ায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। একসময় ছড়া ছিল শিশুদের ঘুমপাড়ানির উপকরণ, তা এখন ঘুমজাগানিয়া স্লোগানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এ দেশে যারা ছড়াসাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্য থেকেই ফয়েজ আহ্মদ, সুকুমার বড়ুয়া, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, ফারুক নওয়াজ, রহীম শাহ, আলম তালুকদার এবং রফিকুল হক দাদুভাইÑএই আটজন ছড়াশিল্পীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা আটটি বই প্রকাশ করা হলো মজার পড়া ১০০ ছড়া শিরোনামে। এঁদের সবার ছড়া নির্বাচন করা হয়েছে মূলত ছোট্টমণিদের কথা মাথায় রেখেই। দাদুভাই ছড়া বানান মুখে ছড়া কেটে। শব্দ, ছন্দ, বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্যে এবং প্রকাশভঙ্গির আন্তরিকতার ক্ষেত্রে তাঁর উপমা তিনি নিজেই। তাঁর ছড়ায় বাংলাদেশের সমকালীন সমাজচিত্র চমৎকারভাবে উঠে এসেছে।
Rafiqul Huq Dadu Bhai- আমাদের দাদুভাই। সমকালীন বাংলা ছড়া সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও শিশুসংগঠক রফিকুল হক। তিনি ‘দাদুভাই’ নামেই বেশি পরিচিত। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি স্বনামধন্য গীতিকার ও নাট্যকারও। টেলিভিশন ও বেতার মাধ্যমে তাঁর লেখা অসংখ্য বড়দের নাটক ও শিশুতোষ গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আবদুল আলীমের কণ্ঠে তাঁর লেখা গান ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা, কোন দূরে যাও চইলা’ আজও সাধারণ মানুষের প্রিয় গান। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘নতুন বাড়ি’র রচয়িতা। বিটিভিতে প্রচারিত ছোটদের প্রিয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘অঙ্কুর’-এর রচয়িতা ও পরিচালক। রফিকুল হকের জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৩৭। পিতা মরহুম ইয়াছিন উদ্দিন আহম্মদ, মাতা মরহুমা রহিমা খাতুন। পৈতৃক নিবাস রংপুর শহরের কামালকাচনায়। দাদুভাই দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। উপমহাদেশে শিশু-কিশোরদের প্রথম সংবাদপত্র কিশোর বাংলা তাঁর সম্পাদনায় ঢাকা থেকে দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয়। এখন তিনি দৈনিক যুগান্তর-এর ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। বাংলা শিশুসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রফিকুল হক ২০০৫ সালে ভারতে বিহারের রাজধানী পাটনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ‘স্ক্রোল অব অনার’, ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য সম্মেলনে বিশেষ সম্মাননা, ১৪০৫ বঙ্গাব্দে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা ও ফেলোশিপে ভূষিত হন। রফিকুল হকের ছড়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : পান্তাভাতে ঘি, বর্গি এলো দেশে, নেবুর পাতা করমচা, ঢামেরিক, আমপাতা জোড়া জোড়া, সমকালীন ছড়া ইত্যাদি। নাটক বই বই হই চই ও রূপকথার গল্প প্রাচীন বাংলার রূপকথা বিশেষভাবে আলোচিত।