১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য-সমাজ প্রতিষ্ঠার পর, ১৯২৭ সালের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন উদ্ভোধন করতে আসেন কাজী নজরুল ইসলাম। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সাহিত্য-সমাজের অভিযাত্রিকদের অভিনন্দিত করে তিনি বলেছিলেন : “...বহুকাল পরে কাল রাত্রে আমার ঘুম হয়েছে। আজ আমি দেখছি এখানে মুসলমানের নূতন অভিযান শুরু হয়েছে। আমি এই বার্তা চতুর্দিকে ঘোষণা করে বেড়াব। আর একটি কথাÑএতদিন মনে করতাম আমি একাই কাফের কিন্তু আজ আমি দেখে আশ্বস্ত হলাম যে , মৌঃ আনোয়ারুল কাদীর-প্রমুখ কতগুলি গুণী ব্যক্তি দেখছি আস্ত কাফের। আমার দল বড় হয়েছে এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা আর আমি চাই না।” নজরুলের এ-বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের (অন্যতম প্রধান) কাণ্ডারী হিসেবে আনোয়ারুল কাদীরের ভূমিকার প্রতি স্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বুদ্ধিমত্তা আন্দোলনের অন্যান্য সারথিদের সম্পর্কে যা বা যতটুকু জানা যায়, আনোয়ারুল কাদীর সম্পর্কে তা জানা যায় না। লেখক হিনেবেও আনোয়ারুল কাদীর ছিলেন স্বল্পপ্রজ। তাঁর একমাত্র প্রকাশিত গ্রন্থ, একটি প্রবন্ধ-সংকলন, ‘আমাদের দুঃখ’ নামে ১৯৩৪ সালে (১৩৪১ বঙ্গাব্দ) কলকাতার ৪০ মির্জাপুর স্ট্রিটস্থ মডার্ন পাবলিশিং সিণ্ডিকেট থেকে সুরেশ চন্দ্র দাম কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বইটিতে মোট আটটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। তাঁর মনন বা চিন্তাশক্তির ধার প্রতিটি রচনাকেই এক ধরনের দীপ্তি দিয়েছে। তিনি সমাজ-সংস্কার চেয়েছেন, তবে সমাজের একজন হিসেবে সহানুভূতিশীল মন নিয়ে সমাজের দোষত্রুটি ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন। বইটি পুর্নমুদ্রিত হওয়ায় সচেতন পাঠক বিস্মৃত এই চিন্তানায়ক সম্পর্কে যেমন জানতে পারবেন তেমনি উপলব্ধি করতে পারবেন দীর্ঘকাল পরেও তাঁর চিন্তাগুলো মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক।
Qazi Anwarul Kadir কাজী আনোয়ারুল কাদীর ছিলেন মুসলিম সাহিত্য-সমাজ এবং বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী। তাঁর জন্ম ১৮৮৭ সালে, আন্দামানের পোর্টব্লেয়ারে। তাঁর বাবা আবদুল কাদীর ছিলেন সেখানকার সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যশোর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর আনোয়ারুল কাদীর ১৯১০ সালে যশোর জেলা স্কুলেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতাকালে আবুল হুসেনকে তিনি তাঁর ছাত্র হিসেবে পান। এক বছর পরই আনোয়ারুল কাদীর ঢাকা সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক পদে বদলি হয়ে যান। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপনা ছাড়াও প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল অফিসার স্টেপল্টনের সহকারী ও পরে উপাচার্য পি জে হার্টগের অধীনে তাঁর সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একে একে তিনি নোয়াখালি, কৃষ্ণনগর, কলকাতা, জলপাইগুড়ি ও বরিশালে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে চাকুরি করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন। শিক্ষক হিসেবে বা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যখন যেখানে কর্মরত ছিলেন, সর্বত্র সমান নিষ্ঠায় শিক্ষার্থী, সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে জ্ঞান ও মুক্তচিন্তা চর্চাকে উৎসাহিত করেছেন। সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও বরিশালে যে-বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেন সেখানেও ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে আদর্শ ছাত্র’ গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Qazi Anwarul Kadir- ছিলেন মুসলিম সাহিত্য-সমাজ এবং বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী। তাঁর জন্ম ১৮৮৭ সালে, আন্দামানের পোর্টব্লেয়ারে। তাঁর বাবা আবদুল কাদীর ছিলেন সেখানকার সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যশোর জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর আনোয়ারুল কাদীর ১৯১০ সালে যশোর জেলা স্কুলেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতাকালে আবুল হুসেনকে তিনি তাঁর ছাত্র হিসেবে পান। এক বছর পরই আনোয়ারুল কাদীর ঢাকা সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক পদে বদলি হয়ে যান। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে যুক্তিবিদ্যার অধ্যাপনা ছাড়াও প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল অফিসার স্টেপল্টনের সহকারী ও পরে উপাচার্য পি জে হার্টগের অধীনে তাঁর সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একে একে তিনি নোয়াখালি, কৃষ্ণনগর, কলকাতা, জলপাইগুড়ি ও বরিশালে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে চাকুরি করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেন। শিক্ষক হিসেবে বা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যখন যেখানে কর্মরত ছিলেন, সর্বত্র সমান নিষ্ঠায় শিক্ষার্থী, সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে জ্ঞান ও মুক্তচিন্তা চর্চাকে উৎসাহিত করেছেন। সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও বরিশালে যে-বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেন সেখানেও ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে আদর্শ ছাত্র’ গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।