নীলার সঙ্গে আকাশের পরিচয় হয় তার বান্ধবী বৃষ্টির মাধ্যমে। তারপর প্রেম। বৃষ্টির কাছ থেকে নীলা এবং তার গ্রামের বাড়ির কথা শুনে আকাশের মা সুলতানা আকাশ এবং বৃষ্টিকে নীলাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বলে। সুলতানার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর নীলা একদিন তাদের বাড়িতে যায়। আকাশ তার বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান, বাবা সিরাজ সাহেব পুলিশে চাকরি করে অথচ তাদের গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি আর আভিজাত্য দেখে তাদের প্রেমের পরিনতির কথা ভেবে নীলার মনে সংশয় দেখা দেয়। কারণ নীলার বাবা একজন নীতিবান মানুষ, আকাশের বাবা অনৈতিকভাবে বা দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন একথা জানতে পারলে তিনি নীলাকে আকাশের সঙ্গে বিয়ে নাও দিতে পারেন। নীলার রুমমেট মোহনা। দু’ভাই-বোনের মধ্যে মোহনা বড়। মোহনার বাবা মোখলেস সাহেব একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা, ছোটভাই মিলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মোখলেস সাহেব সরাসরি মোহনাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ দিতে অসামর্থ্যের কথা না বলে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মোহনা তার বাবার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে পার্ট টাইম চাকরি করে নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করার কথা বলে। বাস্তবে তা সম্ভব হয় না, নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করার জন্য মোহনা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। হাজতে বসে মোহনার তার বাবার কথা মনে পড়ে। তার বাবা নিজেকে ভালো ছাত্র ছিলেন বলে দাবি করেন এবং একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গর্ববোধ করেন। অথচ ছাত্রজীবনে একজন ভালো ছাত্র এবং কর্মজীবনে একজন সরকারি কর্মকর্তার মেয়েকে নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করতে গিয়ে নিজেকে অনৈতিক কাজ করতে হয় একথা ভেবে মোহনার মন ঘৃণায় ভরে যায়। নীলার লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর সুলতানা আকাশের সঙ্গে নীলার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নীলার বাবা আতিয়ার সাহেবের কাছে যান। আতিয়ার সাহেব আর সুলতানা একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি সুলতানার কাছ থেকে তাদের বিষয়-সম্পত্তির বিবরণ শুনে একজন দুর্নীতিবাজ পুলিশ অফিসারের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। বিয়েতে বাবার সম্মতি নেই জেনে নীলা আকাশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আকাশের বাবার দুর্নীতির কারণে নীলাকে তার বাবা আকাশের সঙ্গে বিয়ে দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন একথা জেনে আকাশ তার বাবার কাছ থেকে তার আয়ের উৎস জানতে চায়। সিরাজ সাহেব আকাশের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। আকাশ তার দুর্নীতিবাজ বাবা এবং তার বাবাকে দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করার অপরাধে বাবা-মা’র সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বাড়ি থেকে চলে যায়। আতিয়ার সাহেব নীলাকে তার মতো দুর্নীতিবাজের ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, দুর্নীতি করার কারণে নিজের ছেলে তাকে ত্যাগ করেছে একথা সিরাজ সাহেবের বিবেককে দারুণভাবে দংশন করে, এদেশের মানুষ, প্রকৃতি সমস্ত কিছুর কাছে তার নিজেকে অপরাধী এবং অকৃতজ্ঞ বলে মনে হয়। লজ্জা আর ঘৃণায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। সিরাজ সাহেব বাড়িতে না ফেরায় সুলতানা থানায় যোগাযোগ করেন। অনেক খোঁজাখুজির পর পুলিশ একটি আবাসিক হোটেল থেকে সিরাজ সাহেবের লাশ উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় একটি ডায়েরি, তিনি তার ডায়েরিতে লিখেন সরকারি চাকরিতে সীমাহীন কাজের বোঝা, মেধার যথাযথ মূল্যায়নের অভাব, জীবন-যাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বেতন কাঠামো, আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা, সম্পদের অসম প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজব্যবস'া কীভাবে জীবিকার প্রয়োজনে পুলিশের চাকরিতে জয়েন করা একজন পুলিশ অফিসারের দুর্নীতিবাজ হওয়ার নেপথ্য কাহিনী।
মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান মূলত সরকারি কর্মকর্তা। বইয়ের সঙ্গেই তাঁর সার্বক্ষণিক ওঠা-বসা অর্থাৎ গ্রন্থাগারিক। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক পদে চাকুরীকাল সম্পন্ন করে সম্প্রতি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে আছেন। নানাবিধ গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন নিরন্তর।কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি ইংরেজি দৈনিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বাল্যকাল থেকেই বইয়ের নেশা, অন্যদিকে লেখার নেশা। সব মিলিয়ে তিনি একজন গ্রন্থপ্রেমিক। জন্মেছেন নানা বাড়িতে ১৯৬১ সালের ১ আগস্ট, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার রূপকথার গ্রাম খ্যাত হুলহুলিয়ায়।পিতা মফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আদর্শবাদী শিক্ষক। এ অঞ্চলে তিনি ‘হেডপণ্ডিত’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। মা জাহানারা আহমেদ আজন্ম গ্রন্থ অনুরাগী। ছাত্রজীবন থেকেই পরিবেশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার বিষয়ে কৌতুহলী ছিলেন। লিখেছেন নিরলসভাবে অনুসন্ধানী রচনা। তিনি বহু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহন ও গবেষণার কাজে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। সংবাদপত্রে বিষয়ভিত্তিক কলাম ছাড়াও এ পর্যন্ত তাঁর বাইশ হাজার চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচশ’র অধিক।