‘৭১-এর যুদ্ধশিশুঃ অবিদিত ইতিহাসঃ ‘৭১-এর যুদ্ধশিশুঃ অবিদিত ইতিহাস শীর্ষক গ্রন্থটি কোনো সাদামাটা গবেষণাগ্রন্থ নয়; বরং এটি উচ্চতর মানবিক চেতনাকে উজ্জীবিত এবং শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এক গবেষণাধর্মী প্রামাণ্য দলিল বটে। কেননা গ্রন্থটি বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যাণ্ড ও কানাডাতে প্রাপ্ত প্রামাণিক দলিলাদির ভিত্তিতে রচিত । যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের যে অজানা দিক রয়েছে সে দুর্জ্ঞেয় বিষয়ে গবেষণা করে যে নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়, সে বিদিত অংশটুকু এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন লেখক। এই গ্রন্থে পাকবাহিনী কর্তৃক বাঙালি নারীদের প্রতি নির্দয় বর্বরতার চিত্র উপস্থাপনসহ যুদ্ধশিশুদের জন্মকথা এবং তাদের জন্মপরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে তৎকালীন বাংলাদেশ ও কানাডার প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা এবং উভয় দেশের শ্রেণিবৈষম্যবোধ, বর্ণবৈষম্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধশিশুদের জন্মবৃত্তান্ত জানতে হলে এ গ্রন্থের প্রথম তিনটি অধ্যায় পাঠ করা পাঠকের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু পরবর্তী অধ্যায়গুলো, যেমন- বাংলাদেশ থেকে কানাডাঃ যুদ্ধশিশুর দুঃসাহসিক অভিযান; দত্তকগ্রাহী বাবা-মা এবং যুদ্ধশিশুঃ একটি আভরণচিত্র; দত্তকগ্রাহী বাবা-মার আনন্দ-বেদনা এবং কানাডাতে বেড়ে ওঠা যুদ্ধশিশু আধুনিক পাঠকের মনে বিশ্বমানবিকতার কারণে এমন অনেক জিজ্ঞাসা জাগাতে সক্ষম হতে পারে। সেগুলো বর্তমান একুশ শতকের পরিস্থিতি-তাড়িত বিপর্যস্ত মানুষের মনে নতুন অনুসন্ধিৎসা, আশা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানব কল্যাণের সর্বোৎকৃষ্ট মতবাদ গ্রহণের আগ্রহ জাগাবে। শুধু তাই নয়, তৎকালীন অগ্রসর জ্ঞানের আলোকে শ্বেতকায় দত্তকগ্রাহী বাবা-মা সন্তান প্রতিপালনে এবং তাদের দত্তকায়িত সন্তানরা নিজেদের জন্মবৃত্তান্ত জেনেও আবেগ ও বুদ্ধির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ কীভাবে করেছে অপার ভালোবাসায়, তারই জীবন্ত দলিলকে উপস্থাপন করা হয়েছে এই আলোচ্য গ্রন্থে। নিঃসন্দেহে তা একজন সংবেদনশীল ও উদারপন্থী আধুনিক পাঠককেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিয়ে যায় এবং আপনজনের ভালোবাসার স্বরূপ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে অনুপ্রাণিত করে। সর্বোপরি বিশ্বমানবিকতাকে কেন উপেক্ষা করা যায় না দেশে দেশে, কালে কালে এবং সর্বকালে দত্তক সন্তানের মানসজগৎ কেমন হয়ে থাকে এবং ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন্ ধরনের ভূমিকা পরিহার্য তারই অনুপুঙ্খ ও চমকপ্রদ বিশ্লেষণ করেছেন লেখক মুস্তফা চৌধুরী তার তথ্যবহুল গবেষণামূলক গ্রন্থে।