মোহাম্মদ হারু-উর-রশিদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৮শে ডিসেম্বর আসামের তিনসুকিয়া শহরে। পিতা : রহিম উদ্দিন আহমদ, মাতা : সালমা খাতুন। পৈতৃক নিবাস : ব্রাক্ষণবাড়িয়া। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার অন্নদা মডেল হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৭ সালে আইএ পাস করেন ব্রাক্ষণবাড়িয়া কলেজ থেকে মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে। ১৯৬০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সমেত বিএ পাস করেন, ১৯৬১ সালে এমএÑ দুই-ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৪ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ইংরেজি সাহিত্যে। ১৯৬৬ সালে ট্রাইপস পরীক্ষায় অনার্সসহ উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যাপনা বৃত্তিতেই জীবন কাটিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন পাঁচ বছর। বর্তমানে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। একই সঙ্গে তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি। মাঝে দু’বছর (১৯৯৯-২০০০) তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৭৬ সালে মার্কিন সরকারের বৃত্তি লাভ করে হাওয়াই-এর ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে ইংরেজি শিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর্স প্রোগ্রামে আমেরিকায় যান এবং সেখানকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেন। ১৯৮৪ সালে প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ফ্রান্সের নান্তে আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের সাধারণ সভায় সভাপতি নির্বাচিত হন। দুই বছর এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর আগে উপমহাদেশের বিখ্যাত দু’জন ব্যক্তি এই পদ অলংকৃত করেনÑ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন আর পাকিস্তানের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী আই. এইচ. কোরেশী।
প্রফেসর মােহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় মূলত চিন্তাধর্মী রচনা প্রণয়ন করেন। তার অনুবাদ বাংলা ভাষায় লেখা মৌলিক রচনার মতাে সুখপাঠ্য। তরুণ বয়সেই তার মধ্যে চিন্তার যে সজীবতা ও ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল তা ক্রমপরিণত ও ক্রমপক্ক হয়ে উঠেছে দিন দিন। সংখ্যায় তাঁর প্রবন্ধ বেশি নয়। কিন্তু অন্তর্মুল্যে সুগভীর। ধর্ম, দর্শন, দেশ-বিদেশের সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর অধ্যয়ন এবং দেশ-কাল-সমাজ সম্পর্কে তাঁর চেতনা মােহাম্মদ হারুন-উর- রশিদের এই প্রবন্ধগুচ্ছকে এক দ্বিতীয়রহিত প্রমূল্যে অধিষ্ঠিত করেছে। ধর্মের নান্দনিকতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ বইটির প্রবন্ধসমূহে প্রকৃতার্থে এদেশের ভাবনামূলক জগতের নতুন একটি দরােজা খুলে দিল। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক হিসাবে খ্যাতিমান প্রফেসর। মােহাম্মদ হাউন-উর-রশিদ-এর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ : থ্রি পােয়েটস, তিনটি ফরাসি প্রবন্ধ, শব্দের শিল্পরূপ ইত্যাদি। বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি প্রভৃতি ভাষায় কুশলী প্রফেসর মােহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ-এর রচনার পরিমাণ কম কিন্তু মহার্ঘ ।