যে কোন দেশের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে তার জাতীয় ধর্ম, ভাষা, আচার, আচরণ ও ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে। স্বাধীন দেশের সংস্কৃতি বিজাতীয় ভাব এবং বিশ্বসভ্যতার মানব-কল্যাণধর্মী বিজ্ঞান-বিদ্যার, দর্শন ও জ্ঞান-বিদ্যার সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারে; কিন্তু নিজস্ব চরিত্র, ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য বাদ দিয়ে নয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক পরিবেশও সংস্কৃতি নির্মাণের প্রধান উপাদান হ’লেও ধর্ম-বিযুক্ত গণ-অসামর্থিত সংস্কৃতি দেশের স্বাস্থ্যোপযোগী নয়। বর্তমান গ্রন্থ এ-কথারই কিছু বিশদ পর্যালোচনা আছে। ভাষাও সংস্কৃতির অন্যতম বিষয়। কিন্তু ভাষা-সংস্কৃতির ব্যাপারটা বর্তমান মানচিত্রের বাংলাদেশর জন্য ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রের। ইংল্যাণ্ড, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ক্যানাডার আধিবাসীদের ভাষা ইংরেজী। তবুও তাদের ভাষা ও সাহিত্যে দেশ ও রাষ্ট্রীয় চরিত্রের ভিন্নতার রূপ অদৃষ্ট নয়। আজকের ভারতীয় বাংলার আর আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভাষার মধ্যে অনেক মিলের মধ্যেও অনেক ব্যবধান আছে। সেখানেও ধর্ম তার আকাশ-স্পর্শী প্রভাবকে অনতিক্রম্য রেখেছে। গ্রন্থে সে বিষয়টিও তীক্ষ্ম বিশ্লেষণে বিশ্লেষিত। আমাদের সংস্কৃতি চিন্তায় লেখকের এই বিশ্লেষণ উজ্জ্বল ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। শাহাবুদ্দীন আহ্মদ, ১৩৪২ সালের ৮ই চৈত্র (ইংরেজী ২১শে মার্চ, ১৯৩৬); ২৪ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার আরশুল্লাহ্ গ্রামে (বাদুড়িয়ার সংলগ্ন) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মরহুম আফিলউদ্দীন আহমদ, মাতা: মোমেন খাতুন। বাদুড়িয়া মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫২ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজে (বর্তমান আবুল কালাম আযাদ কলেজ) আই,এ,তে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। ১৯৫২ সালের অক্টোবরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন; ১৯৫৩-৫৪ সালে দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে আই, এস, সি পর্যন্ত পড়েন। পারিবারিক সমস্যার কারণে তাঁর পাঠ্য-জীবনের এখানেই সমাপ্তি ঘটে। তাঁদের পরিবারে গান-বাজনার চর্চা ছিল। এই সঙ্গীত এবং সাহিত্যানুরাগ তাঁর মধ্যে বিকাশ লাভ করে। ছেলেবেলা থেকেই আবৃত্তিতে তাঁর অসীম দক্ষতা। ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তান লেখক সংঘের মুখপাত্র ‘লেখক সংঘ পত্রিকা’র সহকারী-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে তিনি সরহুম আমীর হোসেন চৌধুরীর (বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কনিষ্ঠ ভগ্নীর পুত্র) সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক ‘নজরুল ফোরাম’ গঠন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান লেখক সংঘের অফিস সেক্রেটারী নিযুক্ত হন এবং ‘পরিক্রম’ (লেখক সংঘ পত্রিকার পরিবর্তিত নাম) এর সহকারী সম্পাদক রূপে বৃত হন। উল্লেখ্য তিনি স্বল্প কিছুদিনের জন্য ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘নাগরিক’-এর সম্পাদকমন্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন্ ১৯৬৫-৭৩ সালে ‘নজরুল একাডেমী পত্রিকা’র সহযোগী সম্পাদক এবং ১৯৭৩-৭৮ পর্যন্ত উক্ত পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ‘মুক্তধারা’ প্রকাশনা সংস্থার অন্যতম পার্ট-টাইম সম্পাদক রূপেও তিনি কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে এক বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য গবেষণা পত্রিকার তত্ত্ববধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২০-এর মার্চে ঢাকা ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রকাশনা সংস্থায় অনিয়মিত সম্পাদক হিসেবে ও পরে ১৯৮২ তে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশের নিয়মিত সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন। পরে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিন বছর তিনি ইফা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘অগ্রপথিক’-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।