ঊনিশ শ’ সাতচল্লিশে অখ- বাংলা দ্বিখ-িত হয়ে যায়। সেটা ছিল মর্মান্তিক ও অতিশয় ক্ষতিকর এক বিপর্যয়। তার দায়িত্ব ব্রিটিশের তো অবশ্যই, কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগেরও। সে-সময়ে লীগ ও কংগ্রেসের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা চেষ্টা করেছিলেন বাংলাকে এক রাখতে। তাঁরা সফল হন নি। বস্তুত সাফল্যের সম্ভাবনা আগেই নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। এই দ্বিখ-িকরণের বিপদের বিষয়ে বিভিন্নভাবে এবং আগে থেকেই দেশবাসীকে সচেতন করতে চেয়েছিলেন বাংলাভাষার প্রধান কবিদের একজন, কাজী নজরুল ইসলাম। তারপর ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পুর্ব বঙ্গ পাকিস্তানের প্রায়-ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু মানুষের ছত্রভঙ্গদশার অবসান ঘটে নি। তবে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে দুর্দশার অবসা ঘটাবার পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা আশা ছাড়েন নি। ত৭াদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। লড়াইটা আসলে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, কারণ পুঁজিবাদই হচ্ছে সেই দুর্বৃত্ত নিজেকে প্রচ্ছন্ন রেখে একদা যে বাংলাকে ভাগ করেছিল। পাকিস্তান আমলে পুঁজিবাদ বেশ প্রকাশ্য হয়ে পড়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেশবাসীর বিজয় হয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে পুঁজিবাদের তৎপরতাও তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সে মুক্ত এবং অনেকটাই উন্মোচিত।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।