বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা সম্পর্কে অনেক পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনা আছে, কিন্তু বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের সাথে সেসবের সমন্বয় গুটিকয়েক উদ্ধৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। চর্চা ও তত্ত্ব কাছাকাছি হলেও দুটোর ক্ষেত্র ভিন্ন। সাধারণ ধারণায় বাঙালি সংস্কৃতিচর্চা করেছে কিন্তু তত্ত্বের বিষয়ে খুব অগ্রসর কখনই ছিল নাÑএই ধারণাটি পুরোপুরি ভ্রান্ত। সংস্কৃতিতত্ত্বে দু’টি প্রধান স্রোত লক্ষণীয়। একটি হলো, সংস্কৃতি একটি অতি উচ্চমানের নান্দনিকতা ও উৎকর্ষ সম্বলিত বিষয়। দ্বিতীয় প্রধান স্রোত অনুযায়ী উচ্চবর্গীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাধারণ জনগণের সংস্কৃতিকেও সংস্কৃতি হিসেবে গণ্য করতে হবে। দ্বিতীয় স্রোতে সংস্কৃতির এই নতুন ধারণা যুদ্ধোত্তর ষাট দশকে ব্রিটেন ও ইউরোপে উচ্চ শিক্ষায়তনিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে। মনে হয় বিশেষভাবে সেই আলোড়নের ঢেউ তখন এবং এখনও বঙ্গে আসেনি, অন্তত আমাদের সংস্কৃতি-গবেষকগণ এ বিষয়ে মনোযোগ দেন নি। আমার নিজস্ব গবেষণা অবশ্য অন্য কথা বলে। আমি আবিষ্কার করেছি যে, সংস্কৃতির দ্বিতীয় স্রোতের নতুন ধারণা পাশ্চাত্যে সৃষ্ট ও শিক্ষায়তনিক অঙ্গনে উপস্থাপিত হওয়ার পূর্ব থেকেই সেই ধারণা বঙ্গে প্রচলিত ছিল। বর্তমান বইটির প্রতিপাদ্য বিষয় এটাই-এখানে বিশদভাবে উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, বঙ্গের বিদ্বজ্জন নতুন সংস্কৃতি-ধারণায় ও সংস্কৃতিতত্ত্বের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের চেয়ে সর্বদাই অগ্রসর ছিলেন।
১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামাবাদে কর্মরত ড. ফজলুল আলম পালিয়ে সপরিবারে ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৯৬ সনে সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর পরে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে লাইব্রেরি অটোমেশান প্রজেক্ট (উটখঅচ) চালু করেন ও ইউএনডিপি অনুদানের প্রস্তাবিত সকল শর্ত সফলভাবে সময়মত কার্যকর করেন। প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কলাম লিখলেও ২০০২ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর পেয়ে সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন। ২০০৪ সনে প্রকাশিত উপন্যাস ক্রান্তিকালে প্রতারক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ডিগ্রি কোর্সে মনোনীত হয়। ইংল্যান্ডে তার দুটি প্রবন্ধ/গবেষণা বই প্রকাশিত হয়। সেখানে থাকা কালে তিনি নিজ খরচে লাইব্রেরিয়ানশীপে চার্টার্ড, এথনিক রিলেশান্সে মাস্টার্স ও কালচারাল স্টাডিজে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সনে সংস্কৃতির সত্যমিথ্যা প্রকাশ করে তিনি নিজেকে একজন সংস্কৃতি অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর তিনি প্রতি বছর সংস্কৃতি বিষয়ে একটা করে সুচিন্তিত ও তথ্যমূলক বই প্রকাশ করেন। ২০১০ সনে প্রকাশিত সংস্কৃতি সমগ্র সুধী মহলে ও বিদ্বদ্গোষ্ঠীতে বহুল সমাদৃত। তিনি সম্পূর্ণ নতুন বিষয় ‘সংস্কৃতিতত্ত্ব বিরোধিতা’র ওপরও লিখেছেন। তার পাঁচটি ছোটগল্প নাটক ও টেলিফিল্ম হিসেবে টেলিভিশনে প্রদর্শিত হয়েছে। তাঁর একটা উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মানাধীন। তিনি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সর্বপ্রথম বিষয়ভিত্তিক টক-শো ‘কড়া আলাপে’র পরিকল্পক ও উপস্থাপক। তিনি দুটো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন, সিটি ব্যাংকÑআনন্দআলো সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮) ও বাংলা একাডেমি পরিচালিত সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪)।