বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতে থাকি কিভাবে এদেশ বিশ্ব-পরিমণ্ডলে একটি স্বনামধন্য দেশ হিসেবে তার আসন লাভ করবে। বাংলাদেশিরা একটি সম্মানিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় আসন লাভ করতে পারবে দেশ যখন স্বাধীন হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলিতে মুক্তাঞ্চলে এমন কথাই আমি বলেছি বহুবার প্রশিক্ষণে নিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তারা বিশ্বাস করেছে, অস্ত্র হাতে নিয়েছে এবং এ বিশ্বাস নিয়েই সশস্ত্র সংগ্রাম করে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। এখন যখন দেখি সুশাসনের ব্যত্যয় হচ্ছে, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে দুর্বৃত্তায়নের পথে পরিকল্পনাকারীদের পদচারণা প্রভাব বিস্তার করছে, তখনই কিছু কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। এমন সব বিক্ষিপ্ত ভাবনা এ বইতে স্থান পেয়েছে। জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, রাজনীতি ও মানবাধিকার, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, মুক্তচিন্তা ও ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে আমার অনেক প্রবন্ধ এ বইতে স্থান পেয়েছে। এসকল প্রবন্ধ তথ্যবহুল, যুক্তিনির্ভর এবং দিকনির্দেশনামূলক যা পাঠক সমাজকে দেশের কথা, জনগণের অধিকার ও সুস্থ রাজনীতির কথা এবং শুদ্ধাচারের কথা ভাবতে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। এই আলোকে বইটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
ধীরাজ কুমার নাথ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রফিকপুর গ্রামে ১৯৪৫ সালে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতাÑ স্বগীর্য় করুণা কান্ত নাথ, মাতাÑ স্বর্গীয়া সাবিত্রী সুন্দরী দেবী। তিনি চৌমুহনী মদনমোহন হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে। তিনি নোয়াখালি সরকারি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে ৩ বছর কর্মরত থেকে ১৯৬৯ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি গাজীপুর মহকুমার প্রথম প্রশাসক হিসেবে ১৯৭৮ সালে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের ‘আইসিপিডি+৫’ বিশেষ সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি ও রেড ক্রিসেন্ট সমিতির আজীবন সদস্য। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং পল্লী-উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র ঋণ ও সমবায় আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা হচ্ছে ‘পথের দু’ধারে’, ‘সম্প্রতির জনপদে’, ‘সুশাসন : নির্বাচন’, ‘অধিকার : সংস্কার’। তিনি ডেইলী স্টার, দি ইনডেপেন্ডেন্ট, প্রথম আলো, ইত্তেফাক ও যুগান্তর পত্রিকার নিয়মিত কলামিস্ট। তিনি ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।