শতবর্ষ আগে (১৯১৬) হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চর্যাপদ-প্রকাশ আমূল বদলে দিয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস। পাশাপাশি এসেছিল মৈথিলি, উড়িয়া ও অসমীয়া সাহিত্যের ইতিহাস পুনর্বিবেচনার প্রসঙ্গ। তিন দশক পরে রাহুল সাংকৃত্যায়ন তিব্বতে পাওয়া ২০টি চর্যা প্রকাশ করেন (১৯৫৪) এলাহাবাদ থেকে। পরের দশকে শশিভূষণ দাশগুপ্ত সন্ধান পান (১৯৬৩) আর এক গুচ্ছ চর্যার, যার ৯৮টি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় নব চর্যাপদ (১৯৮৮) গ্রন্থে। আশির দশকে জগন্নাথ উপাধ্যায় নেপাল থেকে সংগ্রহ করেন চর্যার তিনটি নতুন পুথি; যার থেকে ১৬৫টি গান বারাণসী থেকে দেবনাগরী অক্ষরে প্রকাশিত হয় চর্যাসংগ্রহ (২০১২) নামে। নেপাল-তিব্বত অঞ্চলে তন্দ্রচর্চা ও বজ্রযানী-আরাধনায় দীর্ঘকাল ধরে যে মন্ত্রগান ব্যবহার হয় তা চর্যারই অনুবৃত্তি। বর্তমান সংকলনে উপস্থাপিত ৩৩৫টি নতুন চর্যা সে-ধারারই অন্তর্গত। এতে সরহ, শবর, ডোম্বী, দারক, গোদারি, কাহ্ন, ভুসুকুর মতো পরিচিত চর্যাকারদের পদ রয়েছে। আবার শাস্ত্রীর সংকলনে পদ নেই এমন প্রাচীন চর্যাকার- জালন্ধরী নাগার্জ্জন, তিলোপা, নারোপা, লীলাবজ্র, অদ্বয়বজ্রের পদও স্থান পেয়েছে। এই তিন শতাধিক পদ আনুমানিক ১০০ কবির রচনা, যার ৮০ জন চিহ্নিত। বর্তমান সংকলনে নব-সংগৃহীত ৩৩৫টি পদের সঙ্গে রাহুলের ২০টি, শশিভূষণের ২১টি এবং জগন্নাথের ৩৭টি পদ পরিশিষ্টরূপে যুক্ত হয়েছে। অষ্টম থেকে বিশ শতকের মধ্যে রচিত এই চার শতাধিক চর্যা বাংলা সাহিত্যের নতুন উপকরণ। সংকলিত হওয়ার পূর্বে দীর্ঘকাল মুখে মুখে প্রচলিত থাকার সময়ে এর পাঠে পরিবর্তন সত্ত্বেও প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভাষার রূপ হিসেবে এর গুরুত্ব অনন্য। আবার বৌদ্ধধর্ম, বিশেষত তন্ত্রযান, বজ্রযান ও বৌদ্ধ দেবদেবীর বিকাশ অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও পদগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের জন্ম চট্টগ্রামে। বোয়ালখালীর হাওলা অঞ্চলে ১৯৫২ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (১৯৮৬) লাভের পরে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন জাপানোর নাগোইস বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯৯০-৯৩)। তাঁর গবেষণামূলক প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ছড়ার ইশকুল (১৯৭৮), ছড়ায় বাঙালী সমাজ ও সংস্কৃতি (১৯৮৮),Comparative Study in Oral Tradition (১৯৯৩) ও Aesthetical Ideas of Gandhi (২০০০)। জীবনীগ্রন্থ রমেশ শীল (১৯৮৭), ফণী বড়ুয়া : জীবন ও রচনা (১৯৯৭) ও রণেশ দাশগুপ্ত (২০১২)। রমেশ শীল : অপ্রকাশিত কবিতাবলী (১৯৮৫), সংস্কৃতি ও উন্নয়ন (১৯৯১), রমেশ শীল রচনাবলী (১৯৯৩),), Culture of Peace (২০০১), Dialogue among Civilization (২০০২), রণেশ দাশগুপ্ত স্মারকগ্রন্থ (যৌথ, ২০০৪), তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিশোর-সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে মিকি মাউস (১৯৭৭), প্যালেস্টাইন (১৯৭৮), ডিজনী নগরে হৈচৈ (১৯৭৯), বাঘের মাসী (১৯৮৯) প্রভৃতি। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক (২০০৭-০৯), জাতীয় যাদুঘরের ট্রাস্টি, ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সদস্য, শিল্পকলা একাডেমী পরিষদ-সদস্য হিসেবে। পালন করছেন বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব। ছিলেন খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ও শিশুকল্যাণ পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক। বিভিন্ন সেমিনার সম্মেলনে যোগদান করেছেন ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, সিংগাপুর, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও আরজেনটিনায়।