"মায়ানগরীর বৃষ্টিকথন" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা : পাঁচ তরুণের শিল্প-সমবায় মায়ানগরীর বৃষ্টিকথন – কুহক আর মায়ায় ভরা পৃথিবীর বয়ান। আত্মগত উচ্চারণ ও অনুভবের এই জগতে দেখা মেলে তরুণতর স্বপ্ন ও সম্ভাবনার। একেবারে অপরিশােধিত, জ্যান্ত আর টাটকা এইসব কথকতা চিনিয়ে দেয় এ-কালের সেই সব তরুণকে যারা উদ্দীপিত হয় প্রেমে ও কামনায়, ব্যথা ও ভঙ্গুরতায়; যে-সমাজ যে-রাষ্ট্র মানুষের মেধা, মনন ও সৃষ্টিশীলতাকে নিষ্পেষিত করে, তার প্রতিরােধে তারা সােচ্চার। মানবিকতাবােধের সঙ্গে শিল্পের সমন্বয়ে তারা তৎপর। তাই এমন বিদ্রুপময় উচ্চারণে ক্ষুব্ধ রনক জামান, 'মার্কিন মুলুকে থাকে কার জনৈক শালা! সােভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙেচুরে গেল? সমকালীন জীবন ও সমাজের সজাগ পাঠক হিসেবে রনককে সহজেই চেনা যায়; যদিও প্রেমানুভূতি তার আরেক অবলম্বন। জাহিন কায়সার জেসন বলেন, 'লড়াইয়ে জিতছে মিথ্যে, আঁধার আর শােষকেরা, লিখছে কালাে ইতিহাস...' কিন্তু জেসন জানেন, এখনও ফুরিয়ে যায়নি সব। ইমরান হােসেন সে তুলনায় হতাশার দোলাচলে বিষন্ন, এ নগরের প্রতি প্রান্তে প্রাণের কোলাহল, ধুলােয় ঘামে গড়ে ওঠা ইটের সভ্যতা। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত আশায় সমর্পিত। তারুণ্যের দ্বিধাদোদুল নেতিবােধ খানিকটা স্পর্শ করেছে। রাহাত সাইফুল আশরাফকেও। তবু তার মর্মে মর্মে ক্রিয়াশীল শুভ ও মঙ্গলময় এক সমাজ-কাঠামাের আকাক্ষা। ফলে তার উচ্চারণ বদলে যায় এভাবে, অথচ নিজসৃষ্ট ফ্রাঙ্কেস্টাইনের হাতেই লেখা আছে। সব প্রভুদের মৃত্যু।' এই চার জনের তুলনায় দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক বেশি রােমান্টিক আসমাউল বিশ্বাস; শহর, নাগরিকতা আর যান্ত্রিক জঞ্জাল ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি কোন এক স্নিগ্ধ জ্যোত্সা রাতে।' পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থায় বিচ্ছিন্নতাবােধ তাকে তাড়িত করে। প্রকৃতপক্ষে অবচেতনে বিদ্যমান বিচ্ছেদ নয়, মিলনাকাঙ্ক্ষা। সব মিলিয়ে পাঁচ কবির পংক্তিতে পংক্তিতে জ্বলজ্বলে জীবন।