আব্দুর রউফ চৌধুরীর পারিপার্শ্বিক জীবনে অমানসিক নির্যাতন ও নিপীড়ন তাঁর মন-মানসকে বিচলিত ও বিগলিত করে তুলে, একে উৎখাত করার জন্য তিনি 'সমাজতন্ত্র-কম্যুনিজম'কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নূতন সাফল্য অর্জন করার কথা বিশ্বাস করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, 'সমাজতন্ত্র-কম্যুনিজম'ই পারে সমাজের নীচুতলার যুগ-যুগ ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে-থাকা কোটি সর্বহারা মানুষের মুক্তির পথকে অবারিত করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে। 'সমাজতন্ত্র-কম্যুনিজম'ই পারে মেহনতি মানুষকে অর্থনৈতিক শোষণ এবং সামাজিক দাসত্ব-শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে। তাই তিনি মনে করেন, 'সমাজতন্ত্র-কম্যুনিজম' নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের উপর সকল প্রকার শোষণের অবসান ঘটিয়ে শ্রেণীহীন-শোষণহীন সমাজ-ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি এও বিশ্বাস করেন, নিপীড়িত জনগণ যুগ-যুগ ধরে যে শোষণমূলক ব্যবস্থার কালোফণার ছুঁবলে ধ্বংস হচ্ছে, তার থেকে মুক্তির একমাত্র পথই সর্বহারার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে 'সমাজতান্ত্রিক-কম্যুনিস্ট' সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। তাই 'সমাজতন্ত্র-কম্যুনিজম'-এর ইতিহাস এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে; তবে ইতিহাস বলতে শুধু ঘটনা প্রবাহই নয়, এখানে আছে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের দর্শন, রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র, বিপ্লব, এবং সেই সঙ্গে তাঁদের সময়ের বিভিন্ন দর্শন, মতাদর্শ, ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি বিষয়ে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। লেখকের নিজস্ব লেখার ভঙ্গির কারণে অনেক জটিল বিষয়ও হয়ে উঠেছে সহজবোধ্য ও সুখপাঠ্য।
জন্ম : ১লা মার্চ ১৯২৯। মুকিমপুর গ্রাম, হবিগঞ্জ। মৃত্যু : ২৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৬। স্কাউট ভবন, হবিগঞ্জ সদর। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে বি.এ শেষ বর্ষ সমাপ্তির পূর্বেই আউশকান্দি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সপরিবারে পাকিস্তানে বসবাস শুরু। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সপরিবারে দেশে প্রত্যাবর্তন। ১০ জানুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে পৌঁছানো ও পরে ব্রিটিশ সরকারের এরোপ্লেন গবেষণা কেন্দ্রে স্পেশাল গ্রেডের চাকরিতে যোগদান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পেশা বদল। ম্যানেজার, ইলেকট্রিক, মিস্টি, ফিটার। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি তাঁর বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে শুরু করেন। আবদুর রউফ চৌধুরীর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, সাহিত্য ও রচনাসম্ভার বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।