"সূরায়ে ফাতেহার তাফসীর" বইটির শুরুর কথা অংশ থেকে নেয়াঃ আল্লামা তাকী ওসমানী। হিন্দ ও পাকের গন্ডি পেরিয়ে গােটা আরব আজম তথা সপ্তমহাদেশের প্রায় সর্ব প্রান্তে যার ইলম ও গবেষণা সমানভাবে আদৃত এবং চর্চিত। যার দরসের তাকরীর, মঞ্চের বক্তৃতা এবং মিম্বারের খােতবার কোন অংশই এখন আর হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। বরং তার আগেই ছাত্রের খাতায়, গবেষকের ডায়েরীতে কিংবা রেকর্ডারের অদৃশ্য লাইব্রেরীতে জমা পড়ে যায়। সেই সাথে মুহূর্তের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে পড়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রায় সব কটি ইসলামী ওয়েব মিডিয়ায়। তার তাদরীস-তাকরীর, ওয়াজ-বক্তৃতা এবং লেখনীর সব কিছুই এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে মুসলিম উম্মাহর ঈমান এবং আমলের খােরাক যুগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। তার অসংখ্য কিতাব, তাকরীর এবং নসীহত অনূদিত হয়ে এখন পাঠকের কাছে এমন পরিচিত এবং আদৃত যে, অনেক পাঠকের ভ্রম হওয়াও অস্বাভাবিক নয় যে, তিনি কোন বিদেশী লেখক নন। আসলে একজন সফল লেখকের কোন ভৌগােলিক সীমারেখা থাকে না। থাকে না তার তেমন কোন দেশ পরিচয়ও। তার পরিচয় তিনি একজন লেখক। এক্ষেত্রে পাঠক যেখানে আছে সর্বত্রই তার সমান বিচরণ। সমান আদর। আর তিনি শুধু লেখক ই নন একজন বিদগ্ধ আলিম। ইসলামী উলুমের প্রায় সবকটি শাখায় রয়েছে যার সমান পদচারণার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। হাদীস, তাফসীর, ফেকাহ ও বিচার কোনটাতেই দখল কম নেই। এসবের পাশাপাশি পাকিস্তান শরীয়া আদালতের ছিলেন প্রধান বিচারপতি। পাকিস্তানের জামে মসজিদ বাইতুল মুকাররমে জুমার পূর্বে দীর্ঘকাল যাবৎ তাকরীর করে যাচ্ছেন। সেই তাকরীরগুলােই গ্রন্থিত হয়ে পাঠকের হাতে এসেছে ইসলাহী খুতুবাত’ নামে ১৮ খণ্ডে। এরপর শুরু হয়েছে নতুন আঙ্গিকে কোরআন তাফসীরের ধারা। এখানে তিনি নামাযে বহুল পঠিত কোরআনে কারীমের ছােট ছােট গুরুত্বপূর্ণ সূরা সমূহের তাফসীর পেশ করছেন অনেক দিন থেকে। হযরতের সেই তাফসীরও আলহামদুলিল্লাহ পাঠকের হাতে পৌঁছে গেছে অসমাপ্য চার খণ্ডে। মােট তেরােটি মজলিসে হযরত সূরায়ে ফাতেহার মর্ম-সিরাতে মুস্তাকীমের হাকীকত-তাৎপর্য তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। বংলাভাষাভাষী পাঠকের জন্য তা-ই একত্রিত করে হাজির করার প্রয়াস চালানাে হয়েছে পুনরাবৃত্তি বর্জন করে।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।