ফ্ল্যাপে লিখা কথা শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ নুরুল হক ও শেখ আছিয়া খাতুনের ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রথম সন্তান। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় তার প্রাথমিক লেখাপড়া। এরপর ঢাকায় এসে মেট্রিক, আইএ, বিএ অনার্স ও এমএ পাশ করেন। ষাটের দশকের গোড়ায় জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই পাস করে এলএলবি। জেনারেল আয়ুব স্বৈরশাসকের আমলে কনভোকেশন বয়কটের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে শেখ মনির এমএ ডিগ্রী বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের দুইবার সাধঅরণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি দীর্ঘ কারাভোগ করে’৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে কারামুক্তি লাভ করেন। শেখ মনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বড় বোনের ছেলে। জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন অন্যতম রূপকার। ‘৭১-এ তিনি রাজনীতি সচেতন বিএলএফ কর্মীদের নিয়ে গঠন করেন মুজিব বাহিনী-সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীরও রয়েছে বিশেষ অবদান।
স্বাধীনতাত্তোর কালে তিনি পর পর তিনটি পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে শুরু করেন স্বাধীন দেশে নতুন এক সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের মাঝে লেখাপড়া সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই তিনি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তাতে তিনি অনেকখানি সফলকামও হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, তৎকালে বাম রাজনৈতিক অঙ্গনেই এ বিষয়গুলো কেন্দ্রীভূত ছিল।
শেখ মণি’কে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবার হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর সাথেই। ঘাতকরা জানতো শেখ মণি বেঁচে থাকলে রাজনীতির পট আবার পাল্টে যেতে পারে। এক মহা রাজনৈতিক শূন্যতা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙ্গালির নিরন্তন লড়াই আজও সমাপ্ত হয়নি।
ফকীর আবদুর রাজ্জাক, মূলত ও সাংবাদিক ও কলামিস্ট। রাজনীতির সাথেও তার সম্পৃক্ততা ছিল। বাংলার বাণী দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হবার প্রথম দিন ২১ ফেব্রুয়ারি '৭২ থেকেই সহকারি সম্পাদক হিসেবে তাতে যােগ দেন। স্বাভাবিক কারণেই সম্পাদক ও যুব নেতা শেখ মণিকে তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন এবং বুঝতে চেষ্টা করেছেন। শেখ মণির মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত তার অসংখ্য স্মৃতি-ঘটনা জানা রয়েছে সম্পাদকের। এ সম্পর্কিত তার স্মৃতিচারণমূলক বই শেখ ফজলুল হক মণি’ অনন্য রাজনীতির প্রতিকৃতি ২০১০-এ আগামী প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলার বাণী বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সিনিয়র সহকারি সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর থেকে গত দশ বছর তিনি দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফ্রীল্যান্স কলামিস্ট হিসেবে কাজ করে চলেছেন। বিমল কর অধুনালুপ্ত বাংলার বাণীর সহকারি সম্পাদক হিসেবে পাঁচ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানেও তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কলাম লেখেন। সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতের সাথেই তার জীবন আবর্তিত। তিনি নরসিংদী জেলার অধিবাসী ।