"শিক্ওয়া ও জওয়াবে শিক্ওয়া" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: আল্লামা ইকবাল ইউরােপ অবস্থানকালে তাদের চিন্তাধারা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দৈনন্দিন জীবনে উন্নতি এবং তাদের নিজ তাহযীব ও তামাদুনের মূল্যায়নকে অতি নিকট থেকে দেখার সুযােগ তাঁর হয়েছে। তিনি ইউরােপবাসীর জ্ঞান চর্চা, বিজ্ঞানে অগ্রগতি, স্বাধীনতার চেতনা, কর্মপদ্ধতি ও দেশপ্রেম দ্বারা খুব প্রভাবিত হন। অবশেষে তিনি তাঁর জন্মস্থানে ফিরে আসেন। ফিরে এসে মুসলমানদের মধ্যে অলসতা, কর্মেঅনীহা, দাসত্ব মনােভাব, অর্থনৈতিক মন্দা, জ্ঞান অন্বেষণের প্রতি অনীহা ইত্যাদি দেখে খুব মর্মাহত হন। তিনি আরাে দেখতে পান মুসলমানরা আমলীভাবে উদাসীন হওয়া সত্ত্বেও শুধু ইসলামের মৌলিক আকিদা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতেই নিজেদের ব্যাপারে আল্লাহর প্রিয় কওম ও মনােনীত জাতি হওয়ার ভুল ধারণায় পড়ে আছে। মুসলমানরা একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়ায় নিজেদেরকে তাে নিজেরা ইসলামের প্রেমিক মনে করছে; কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা কুরআনী শিক্ষা, উসওয়ায়ে রাসূল এবং ইসলাম থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছে। অধিকন্ত তারা আল্লাহর উপর দীন-দুনিয়ার সকল প্রকার নাজ ও নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযােগ করে। এ কথাই ইকবালের কবিতা শিওয়ার মূল উৎস। শুধু ভারতবর্ষ নয় বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুসলমানরাও রাজনৈতিক পশ্চাদপদতা, অর্থনৈতিক দৈন্যতা এবং গােলামী মনােভাবের ছােবলে আটকে পড়েছিল। ইরাক, ইরান, তুর্কী, মিশর এবং আফ্রিকাতেও তাদের অবস্থা তেমন ভালাে ছিল না। এমনিভাবে তারাবলুস এবং বলকান এর যুদ্ধের বিপর্যয় ও মুসলমানদের অধঃপতনের অনুভূতিকে আরাে বেশি কঠিন বানিয়েছিল। বিশ্বের মুসলমান বিশেষভাবে ভারতীয় উপমাহদেশের মুসলমানের সােচনীয় অবস্থা এবং গােলামী ও পরাধীনতা ইকবালকে প্রসিদ্ধ কবিতা ‘শিওয়া ও জওয়াবে শিওয়া’ লেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। আল্লামা ইকবাল (রহ.) মুসলমানদের করুণ অবস্থা দেখে বর্তমান মুসলমানদের অধঃপতনের কারণসমূহ এবং অতীতকে এই দুই কবিতায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। ‘শিকওয়া ও জওয়াবে শিওয়া’ পড়ে একদিকে আমাদের অতীত উন্নতীর ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠে। অপর দিকে আমাদের বর্তমান অধঃপতনের কারণও সুস্পষ্ট হয়ে যায়। আল্লামা ইকবালের মূল উদ্দেশ্য এই ছিল যে, আমরা আমাদের আলােকিত অতীতকে স্মরণ করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সু-সজ্জিত করতে পারি।