"মোস্তফা চরিত" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: একোন ধর্মের বিশেষত্ব ও সত্যতার সম্পূর্ণ উপলব্ধি করিতে হইলে, সেই ধর্মের প্রবর্তক যিনি, সর্বপ্রথমে তাঁহাকে সম্যরূপে চিনিয়া ও বুঝিয়া লইতে হয়। কতকগুলি বিশ্বাস, কতকগুলি অনুষ্ঠান এবং কতকগুলি বিষয়ের জ্ঞান- এই ত্রিধারার একত্র সামবেশ-ফলের নামই- ‘ধর্ম। আমরা মােছলেম এবং আমাদের ধর্মের নাম- এছলাম। এছলামের বিষয় সম্যকরূপে অবগত হইতে হইলে এছলামের সত্যতা ও বিশেষত্বে বিশ্বাস স্থাপন করিতে হইলে, সর্বপ্রথমে হযরত মােহাম্মদ মােস্তফা (স)-এর চরিত্রের মাহাত্ম্য ও বৈশিষ্ট্যগুলিকে সম্যকরূপে জ্ঞাত হইতে- অন্তত: জ্ঞাত হইবার চেষ্টা করিতে হইবে। ঐতিহাসিক হিসাবে (ভক্তের হিসাবে নহে) জগতের সাধুসজ্জন ও মহাপুরষগণের জীবন ও চরিত্র আলােচনার চেষ্টা করিলে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায় যে, কিংবদন্তিসঙ্কলক ঐতিহাসিক এবং অন্ধ ভক্তগণের দ্বারা তাঁহাদের প্রকৃত জীবন ও জীবনের আদর্শস্থানীয় আসল বিষয়গুলি হয়ত একেবারে ঢাকা পড়িয়া গিয়াছে, অথবা এমন পর্বত পরিমাণ কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের আবর্জনারাশির তলে তাহা চাপা পড়িয়া গিয়াছে- যাহার উদ্ধার একেবারে অসাধ্য না হইলেও সহজসাধ্যও নহে। বইটিতে মোস্তফা চরিতের বিভিন্ন উপায় বা সূত্র, বিভিন্ন হাদিছের বর্ননা, অন্যান্য ধর্মসমূহের তূলনা করা হয়েছে।
মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ (৭ জুন ১৮৬৮ - ১৮ আগস্ট ১৯৬৮) ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক ছিলেন। পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্ম। পিতা আলহাজ গাজী মাওলানা আব্দুল বারি খাঁ ও মাতা বেগম রাবেয়া খাতুন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। ছিলেন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমি ফেলো। ১৯৮১ সালে বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ঢাকার বংশালে আহলে হাদীস মসজিদে প্রার্থনারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।