"ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক গ্রন্থটি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিশিষ্ট কলামিস্ট, ভাষাচিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের কয়েকটি লেখার সমন্বয়ে প্রণীত। এই লেখাগুলাের মধ্যে লেখকের ভাষাচিন্তা, বিশেষ করে বাংলা ভাষা নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ সুচারুভাবে উঠে এসেছে। গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ থেকে শেষ প্রবন্ধ পর্যন্ত লেখকের গবেষক-দৃষ্টির সঙ্গে সমকালীন একাগ্রতার চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে। ঢাকার ভাষা' প্রবন্ধে প্রাচীন নগর’ ঢাকার ভাষা থেকে আধুনিক রাজধানী-শহর’ ঢাকার ভাষায় যে বৈচিত্র্য এসেছে, সে উল্লেখ আছে। অন্য দিকে বাংলা ভাষায় আরবি-পারসি শব্দ কতটুকু এবং কী পরিমাণ ব্যবহার হবে সে বিষয়ে একটি ভিন্ন প্রবন্ধে মন্তব্য করেছেন লেখক। বাংলা ভাষার প্রকৃত শত্রু কারা, সে দিকটাও আর একটি প্রবন্ধে নিজের মতাে করে দেখেছেন ড. সৌমিত্র। এই গ্রন্থের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলাে : ভাষা-বিতর্ক। প্রথম আলাে ও সংবাদ দৈনিক-পত্রিকা দুটোতে ২০০৭ ও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা-বিতর্ক আরম্ভ হয়। বাংলা ভাষা সংক্রান্ত বিতর্কের ইতিহাসে এর খানিকটা হলেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। এতে সৌমিত্র শেখরসহ অনেকে অংশ নেন। এই গ্রন্থে সে বিতর্কসমূহ উল্লেখ করার চেষ্টা আছে। বলা প্রয়ােজন, ভাষা-বিতর্কের মতাে মহৎ উদ্যোগ পত্রিকা দুটোর পক্ষাবলম্বনের জন্য শেষ অবধি মরুপথের স্রোতধারার মতাে হারিয়ে গিয়েছিল।
ড. সৌমিত্র শেখর প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ড. শেখর সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিদ্যাসাগরপ্রফেসর ড. ক্ষেত্র গুপ্তের তত্ত্বাবধানে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যােগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, প্রভাষক পদে। পরের বছরই প্রভাষক হিসেবে আসেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে। সাহিত্য-আলােচনায় তিনি প্রয়ােগ করেন নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যক্তির মন-জোগানাে লেখায় তিনি বিশ্বাস করেন না। গতানুগতিক আলােচনায় ব্যবহৃত প্রাতিস্বিক’, ‘অভূতপূর্ব', ‘তুলনারহিত’ শব্দসমূহ তাই তাঁর লেখায় খুব একটা দেখা যায় না। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ: গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ (১৯৯৫); নজরুল-কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০১); বাংলা সাহিত্য (যৌথ : ২০০১); ব্যাকরণ ভাষাতত্ত্ব ও প্রায়ােগিক বাংলা (যৌথ : ২০০১); বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (২০০৪); সিভিল সােসাইটি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৪); ব্যাকরণ সন্ধান (২০০৬); কথাশিল্প অন্বেষণ (২০০৬); সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া (২০০৭) ইত্যাদি। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ ভাষা-সমিতির জীবনসদস্য। গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস এওয়ার্ড (২০০১) ও ময়েনউদ্দিন ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮) লাভ করেন।