”সেলিম আল দীন রচনাসমগ্র-৯” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা : রচনাসমগ্রের নবম খণ্ডে আটটি নাটক ও সতেরােটি প্রবন্ধ গ্রন্থিত হলাে। নাটকগুলাের মধ্যে সেলিম আল দীনের প্রথম রচিত ও প্রকাশিত মৌলিক নাটক বিপরীত তমশায়; যা একটি একাঙ্কিকা । সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, এ ধরনের নাটক লেখার কথা তখন খুব কম নাট্যকারই ভাবতেন । অপর নাটকটি মহাকবি আলাউলের জীবনচরিতভিত্তিক। সেলিম আল দীনের ভাবনাকে যেসব লেখক নাড়া দিয়েছেন তাদের মধ্যে আলাউল অন্যতম। আলাউলকে শিশু-কিশােরদের মাঝে পরিচিত করানাের দায়বদ্ধতা থেকেই নাটকটি লেখা। এ দুটো নাটক ছাড়া আর তিনটি নাটক—কাবুলিওয়ালা, মহুয়া ও পরীবানুর হাস্তর অন্য লেখকদের লেখার নাট্যরূপ, তবে তা গাধা। নাট্যরূপ নয় । নাটকগুলাে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সেলিম আল দীন তার নতুন ভাবনাগুলােকে পরখ করে নিয়েছেন। বাকি নাটক তিনটি হিতঙ্কর, ক্ষমা ও সাতশ সাতাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত খণ্ড ও ধারাবাহিক নাটক । দুটো হাসির নাটক-যা সেলিম আল দীনের রসবােধের পরিচয় বহন করে। এ খণ্ডের মাধ্যমে সেলিম আল দীনের নাট্যকার পরিচয়ের পাশাপাশি প্রাবন্ধিক পরিচয়টিও দৃঢ় হবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। প্রবন্ধগুলাের ভেতর সেলিম। আল দীনের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক হয়ে ওঠার ক্রম বিবর্তন লক্ষ করা যায় । ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে লেখা প্রবন্ধগুলােতে বাঙলা ভাষা, বাঙলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও নাটকের । ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। যাতে আমাদের বিস্মৃত অতীত সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়াশ লক্ষ্যণীয়।
জন্ম : ১৮ আগস্ট ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। মৃত্যু : ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রবীন্দ্র-উত্তর কালের বাঙলা ভাষার অন্যতম নাট্যকার । তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষসহ। ইউরােপের কোনাে কোনাে অংশে বিস্তৃত হতে চলেছে। তার নাটক অনূদিত হয়েছে ইংরেজি। ভাষাসহ সুইডিশ ভাষায় এবং একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও সিঙ্গাপুরে। বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী ধারায় শ্রমজীবী মানুষ এবং বাঙলার আবহমান কালের সংস্কৃতিকে সেলিম আল দীন তাঁর নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদানে সমর্থ হয়েছেন। শিল্পমূল্যে তাঁর নাটক আজ বাঙলা উপন্যাস ও আধুনিক কবিতার সমপঙক্তিতে সমাসীন। বাঙলা নাট্যসাহিত্যে তিনি এক নবতর শিল্পরীতির প্রবর্তন করেছেন—দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পরীতি। সেলিম আল দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যােগদান করেন। পরবর্তীকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে নাটকের পঠনপাঠনের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি বেঁচে আছেন । মুক্তিযুদ্ধের পর নাট্য আন্দোলনের তিনি অন্যতম পুরােধা ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ।