ফ্ল্যাপে লিখা কথা যতীন সরকার একালের অগ্রণী চিন্তাবিদ- একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তিনি সেই বিরল প্রাবন্ধিকদের অন্যতম যাঁর রচনা সমমনাদের উদ্দীপিত জকরে, ভিন্নমতাবলম্বীদের চিন্তার খোরাক যোগায়। সাহিত্যের কীর্তিমান অধ্যাপক হলেও তাঁর লেখালেখি শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি। সংস্কৃতি, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন ও ধর্মের বিস্তৃত জগতেও তাঁর অবাধ বিচরণ। গত পাঁচ দশকে তাঁর রচনা এদেশের সমাজ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। চিন্তার স্পষ্টতায়, বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণতায়, বক্তব্যের ঋজুতায় ও জীবনদর্শনের বলিষ্ঠতায় তাঁর প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
বিভিন্ন বইয়ে এবং পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর মূল্যবান রচনাসমূহ পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে তোলার প্রয়াসে যতীন সরকারের রচনাসমূহ প্রকাশের এই উদ্যোগ। বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই রচনাসমগ্রে একজন যুক্তিবাদী ও শক্তিশালী লেখকের পরিচয় যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি অর্জিত হবে উচ্চমানের সাহিত্য আস্বাদের অভিজ্ঞতাও। যতীন সরকারের রচনাসমগ্র নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় সংযোজন।
ভূমিকা আমার রচনাসমগ্রের তৃতীয় খণ্ডে যাঁদের জীবনী অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তাঁরা সকলেই ছিলেন লোকসাহিত্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। চন্দ্রকুমার দে’র হাতেই সংগৃহীত হয়েছে ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’র অসাধারণ গাথাগুলো। আর এই চন্দ্রকুমারকেই আবিষ্কার করেছিলেন ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ‘সৌরভ’-এর সম্পাদক শ্রী কেদারনাথ মজুমদার। সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী লোজকসাহিত্য সংগ্রহ ও মূল্যায়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। হরিচরণ আচার্যের কৃতি বাংলাদেশের কবিগানকে সমৃদ্ধ করেছে। ‘বাংলাদেশের কবিগান’ বইটিতে পশ্চিমবঙ্গের বিপরীতে তৎকালীন পূর্ববাংলা, অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের, কবিগানের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করেছি। কবিতার যে ধারাটিকে আমি বাংলা কবিতার মূলধারা বলে বিবেচনা করি, সেই ধারারই ধারক রূপে একালের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কাব্য সাধনা করেছেন বলে আমার মনে প্রত্যং জন্মেছে। সেই প্রত্যয় থেকেই লিখেছি ‘বাংলা কবিতার মূলধারা ও নজরুল’ বইটি।
আমার রচনাসমগ্রের পূর্ববর্তী দুই খণ্ডের মতো এ-খণ্ডটিও সহৃদয় পাঠকদের দ্বারা আদৃত হলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো। অলমিতি বিস্তরেণ।
যতীন সরকার একুশের বইমেলা ২০১২
সূচিপত্র * চন্দ্রকুমার দে * কেদারনাথ মজুমদার * সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী * হরিচরণ আচার্য * বাংলাদেশের কবিগান * বাংলা কবিতার মূলধারা এবং নজরুল * পরিশিষ্ট * ময়মনসিংহের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আন্দোলন
Jatin Sarker জন্ম : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ২ ভাদ্র ১৩৪৩, ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ । দীর্ঘ চার দশক ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচৰ্চার দিক-দিগন্ত, ধৰ্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে আমার যেটুকু সাধ্য । সম্পাদিত গ্ৰন্থ : সোনার তরী, প্রসঙ্গ : মৌলবাদ, জালালীগীতিকা সমগ্ৰ । বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দৰ্শন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-এর পুরস্কারে সম্মানিত। সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।