আফ্রিকা। কৈশোরে শব্দটি শুনলেই মনোজগতে ভেসে উঠত জঙ্গলের দৃশ্য- সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, চিতা, হায়েনা ইত্যাদি। 'অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ' আফ্রিকা আমার কাছে ছিল এক বিস্ময়, ভীতিজড়িত অপূর্ব ভয়ংকর সুন্দর এক স্থান। ছোটোবেলায় শিকার কাহিনি পড়ে জেনেছি আফ্রিকার হিংস্র শ্বাপদের কথা। শুনেছি জঙ্গলাকীর্ণ ঐ ভূখণ্ডে বাস করে অসভ্য নরখাদক বন্য মানুষেরা। মিথ্যাচারের অতিরঞ্জন আমাদের কাছে আফ্রিকাকে উপস্থাপন করেছিল রূপকথার এক ভীতিপ্রদ রাজ্য হিসেবে; জন্তু-জানোয়ার, নিবিড় অরণ্য ও নরখাদকে পূর্ণ এক অদ্ভুত জগত হিসেবে। আফ্রিকার কৃষ্ণবর্ণ বন্য মানুষদের সম্পর্কে আমার শৈশব- লব্ধজ্ঞান তাই কোনোক্রমেই সম্মানসূচক ছিল না। সময়ের সাথে সাথে জানতে পেরেছি আফ্রিকার নিপীড়িত মানুষের নিষ্ঠুর কাহিনি। জেনেছি কীভাবে ঔপনিবেশিক ইউরোপীয়রা ক্রুশবিদ্ধ করেছে আফ্রিকার মানুষের স্বপ্ন, কীভাবে সাদা মানুষেরা তাদের দায়িত্ববোধের (white mens burden) নামে ক্ষতবিক্ষত করেছে মহাদেশটির মানচিত্র। উপনিবেশবাদী ইউরোপীয়রা অরণ্যচারী সহজ সরল মানুষগুলোকে দাসত্বের বন্ধনে শৃঙ্খলিত করেছে, শুষে নিয়েছে আফ্রিকার সম্পদ। আফ্রিকার ভূখণ্ডকে তারা সুবিধামত নিজেদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করেছে। আজও আফ্রিকার মানচিত্র ঔপনিবেশিক শক্তির সেই নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।