"আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও আমাদের গণিত উৎসব" বইটির ভূমিকার পরিবর্তে অংশ থেকে নেয়াঃ ২০০৯ সালের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড পদক প্রাপ্তির মাধ্যমে আমরা প্রবেশ করেছি নতুন যুগে। ২০০১ সালে শুরু হওয়া কার্যক্রমের ব্যপ্তি, পরিসর সবই বেড়েছে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়ােজনে বিভাগীয় ও জাতীয় উৎসব ছাড়াও এখন অনেকেই গণিতের এই কর্মযজ্ঞে শামিল হয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গারের উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়েও এখন গণিত অলিম্পয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর আমাদের উৎসবগুলাের আগেতাে বটেই, এমনকী সারা বছর ধরে আমাকে ব্যাখ্যা করতে হয় গণিত উৎসব কী, কীভাবে এটি আয়ােজন করা যায়, অলিম্পয়াডের প্রশ্নগুলােই বা কেমন, কোনাে নমুনা প্রশ্ন পাওয়া যাবে কী না - এসবই। এসব প্রশ্নের জবাব দিতে আমার অবশ্য কখনাে ক্লান্তি হয় না। প্রথম দিকে আমরা মুখে মুখে নিয়ম কানুন জানাতাম। ছিল প্রথম আলাের বিজ্ঞান প্রজন্ম। এর পরে আমরা যােগ করলাম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পয়াডের ওয়েবসাইট (http://www.matholympiad.org.bd)। এই ওয়েবসাইটে আমরা গণিত অলিম্পিয়াডের নমুনা প্রশ্ন ও নিয়মকানুন প্রকাশ করেছি। তখন আমরা একটা নতুন প্রশ্নের মুখােমুখি হলাম। বলা হলাে, যাদের ইন্টারনেট নেই তারা এগুলাে কীভাবে পাবে। কাজেই, সব সময় মনে হয়েছে এসব প্রশ্নের উত্তর থাকবে সে সরকম একটি বইতাে হতে পারে। আর যদি একটা বই হয়, তাহলে তাতে আরাে কিছু সংযােজন করা যায়! সে জন্য এই বইটি কেবল গণিত উৎসবের জরুরি প্রশ্নের উত্তর নয়। প্রথম আলাের সাপ্তাহিক আয়ােজন বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতা বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের সূতিকাগার। এই পাতায় আমি অনেকগুলাে নিবন্ধ, প্রবন্ধ এবং শ্লোগান লিখেছি আমাদের গণিত উৎসবকে নিয়ে। লিখেছি এই কর্মযজ্ঞের সূচনা পর্ব ও নানা অভিজ্ঞতার কথা। এইগুলাের কোনও কোনােটি প্রতিবেদন আবার কোনও কোনােটি গণিতের নানা বিষয়ের ওপর। ভাবলাম এগুলােও থাকুক, বই-এ। এই বই-এ তাই নানা ধরণের লেখা, কোনটি উৎসবের বর্ণনা, কোনােটি গণিতের ব্যঞ্জনা । আমাদের গণিত উৎসবের দু’টি উদ্দেশ্যের একটি হলাে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল প্রেরণ। আইএম-তে প্রথমে যেতে হয় পর্যবেক্ষক হিসাবে। পরে পাঠানাে যায় দল। ২০০৪ সালে আমি প্রথম গ্রিসের অলিম্পিয়াডে যােগ দেই, বাংলাদেশ দলের একমাত্র সদস্য হিসাবে। কাজ ছিল আইএমও-এর নিয়মকানুন জানা এবং সেখান থেকে দেশবাসীকে জানানাে। আমার পাঠানাে রিপাের্টগুলাে ছাপা হতাে দৈনিক প্রথম আলাে পত্রিকায়। সেই থেকে প্রতি বছর আমি গিয়েছি দলের সঙ্গে। সে অভিজ্ঞতা গুলােও থাকলাে। সেই সঙ্গে এগুলাে বাংলাদেশের আইএমওতে যাওয়ার সূচনা পর্বের সাক্ষীও বটে। আইএমও-তে গণিতের প্রতিযােগিতার বাইরে থাকে একটি নতুন দেশকে জানার সুযােগ। গ্রিস বা মেক্সিকো থেকে ফিরে গণিতের বাইরের, অর্থাৎ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিখিনি। তবে, প্রতি বারই আমার জার্নাল লেখা হতােই। ২০০৫ সালের বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রথম আইএমও-তে যােগ দেওয়া । বাংলাদেশ থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধার কোনাে আন্তর্জাতিক অলিম্পয়াডে যাওয়া সেই প্রথম। দলের সদস্যদের নিয়ে আমার লেখাটি তাই থাকলাে ঐতিহাসিক কারণে। নমুনা প্রশ্ন এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের নিয়মাবলী সংযােজন করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা অলিম্পিয়াডের নানা বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারে। ভালাে কথা। এই বইটি আমি কপিরাইট করেছি সৃজনী সাধারণ লাইসেন্স-এর আওতায়। কারণ আমি ওপেন সাের্স দর্শনে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সফলতার গল্পের সাথে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি মুনির হাসান। তিনি একইসাথে একজন বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার ও উদ্যোক্তা, যিনি তারুণ্য ও উদ্যোক্তা এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বেকারত্বের বাঁধা ডিঙোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো’ এর সাড়া জাগানো পথচলা ও সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই মানুষটিরই হাত। মুনির হাসানের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BdOSN) এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়োজিত আছেন। মুনির হাসানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৯ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানেই সেন্ট মেরিজ, মুসলিম হাই স্কুল ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটিতে শেষ করেন হাই স্কুলের পাঠ। বাকি শিক্ষাজীবন জুড়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদান ও সম্পৃক্ততার জন্য বন্ধু মহলে ‘ম্যাথ মুনির’ নামে পরিচিত হলেও বুয়েটে তাঁর পড়ার বিষয় ছিলো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখি করতে গিয়ে সাহচর্য পেয়েছেন আ. মু. জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল-মুতী, শরফুদ্দিন কিংবা এ আর খানের মতো বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মীদের। তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আরও উদ্যমী হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার পাতারও করেছেন সম্পাদনা। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের সাহচর্যে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। বর্তমানে সেই সফল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মুনির হাসান। তাঁর অসাধারণ সব কাজের সাথে তাল মিলিয়ে, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সময়ে সময়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন মুনির হাসান। মুনির হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, গল্পে গল্পে ধাঁধা, অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক ইত্যাদি। মুনির হাসান এর বই সমূহ এর মধ্যে লেখকের বুয়েটে জীবন নিয়ে লেখা আত্মজৈবনিক বই ‘পড়ো পড়ো পড়ো’ পেয়েছে অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর জীবনেরই মতো মুনির হাসানের বই তাঁর পাঠকদের উদ্দীপিত করে নিজের পছন্দে নিজের জীবন বেছে নিতে ও গড়ে তুলতে।