দুই হাজার সালের মার্চ মাসে দৌলতপুর সরকারি বি.এল. কলেজ থেকে খুলনা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি মহিলা কলেজে প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে আসতে হয়েছিল। একাত্তরের পরে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি যাঁর জমিজায়গা, বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছিল তিনি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। কলেজের জন্য নতুন বিল্ডিং নির্মিত হলেও পরিত্যক্ত মূল বাড়িটি তখনো তাঁর স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়েছিল। দোতলাটি ব্যবহারের অযোগ্য। ছাদ ভেঙে পড়েছে, বড় বড় অশ্বত্থ গাছ গজিয়েছে। কলেজের পিয়ন, আয়ারাও দোতলায় উঠতে ভয় পেত। একতলায় একটি মাত্র ব্যবহারোপযোগী ঘরে ছিল অধ্যক্ষের অফিস। আমাকে সেখানে বসতে হতো। কাজের মধ্যেও একাত্তরের সেইসব দিনের স্মৃতি আচ্ছন্ন করে রাখত আমাকে। সেটা নিয়ে পরে দৈনিক সংবাদে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। মুখবন্ধ হিসেবে লেখাটি এখানে দিয়েছি। এরপর অনেকদিন কিছু লিখিনি। কমরেড রতন সেন পাবলিক লাইব্রেরির পত্রিকা অরিত্র থেকে লেখা চাওয়ায় মনে হয়েছিল একাত্তরের নয় মাস নিয়ে কিছু লেখা যায়। অরিত্র বছরে একবার বেরোত। ছয়টি লেখা ওখানে বেরিয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির জন্য ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হতো। সতর্ক থাকার চেষ্টা সত্ত্বেও পুনরাবৃত্তি, অসংলগ্নতা এড়ানো যায়নি। এই ত্র“টি আমার অযোগ্যতা বলে স্বীকার করে নিচ্ছি। স্মৃতিকথা নয়, আত্মকথাও নয়; বলা যায় নিজের সাথেই কথা বলেছি। একাত্তরের নয় মাসের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে সেইসব মানুষের কথা বলার চেষ্টা করেছি, যাদের কাছে থেকে দেখেছিলাম; বিপদের দিনে আশ্বাসে, বিশ্বাসে যারা আশ্রয়, সাহায্য, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তারাই এ লেখার বিষয়, তারাই এ লেখার চরিত্র।