সুদূর মেক্সিকোর ঐতিহ্যপ্রিয় কন্যা ফ্রিদার ডায়েরি হাতে পাওয়া ছিল আমার জীবনে এক আকস্মিক ঘটনা। নিউইয়র্কের হ্যারি এন আব্রামস্ প্রকাশিত দ্য ডায়েরি অব ফ্রিদা কাহ্লো নামের এই ডায়েরিটি ছিল অন্যরকম এক প্রকাশনা, যেখানে ফুটে উঠেছে জগদ্বিখ্যাত ফ্রিদা কাহ্লোর একান্ত ব্যক্তিগত জগৎ, নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা কিংবা আয়নায় নিজেকে দেখা। প্রিয় কাছের মানুষ, শিল্পী দিলারা বেগম জলি আপার সুবাদে পাওয়া ডায়েরির ইংরেজি অনুবাদ পড়ে আমি অভিভূত তখন। এমন একজন সাহসী মানুষ - যাঁর জীবনসংগ্রাম শুধু বৈচিত্র্যময় নয়, নানা ঝোড়ো হাওয়ায় জীবনের পথ বন্ধুরও বটে। ফ্রিদা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বিপন্নতার টানাপড়েন, শারীরিক অসুস্থতা, পঙ্গুত্বের অক্ষমতা আর না-পাওয়া বেদনার নীলে আচ্ছন্ন এক বিষাদময় জীবনকে সবসময় হাসিমুখে বরণ করেছেন আর তাঁর শিল্পকর্ম ও ডায়েরিটিতে জীবনের কাব্যকে মূর্ত করেছেন রং আর নিঃশব্দ শব্দের স্পর্শে। সেই বিস্ময়কর রমণী আজীবন ছিলেন রহস্যের ধূসর জালে ছায়াবৃত, উপভোগ করতেন অতীত অতিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে নিজের বাস্তবতাকে নতুন রূপ দিতে। ১৯৪৪ সালে ফ্রিদার ডায়েরিটির যাত্রা শুরু। কে এই ফ্রিদা কাহ্লো? শিল্পীমহলে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে অনেকের কাছেই ফ্রিদা কাহ্লো নামটি অচেনা। নিয়তির কাছে পরাজয় মেনে না নেওয়ার প্রত্যয়ে ফ্রিদা এমন একজন নারী, যিনি শারীরিক অসহ্য কষ্ট আর মানসিক নিপীড়নকে অবয়বের আড়ালে লুকিয়ে সকলের কাছে হয়ে উঠেছিলেন সদা প্রাণবন্ত অথচ একান্তে নিজের পরিসরে যন্ত্রণাবিদ্ধ আহত পাখির মতো কাতর। তিনি একজন উঁচুমানের শিল্পী হিসেবে খ্যাত। নারীহৃদয়ের চিরন্তন সত্তার প্রতিভূ হলেও ফ্রিদা ছিলেন বিশেষ ব্যক্তিত্বের কায়ায় অনন্য। অবিরাম জীবনসংগ্রামী এই নারী তাই হয়ে ওঠেন এক দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা। এরপর আরেক প্রিয় মানুষ, আমার ছোট ভাই প্রফেসর সাইফ রহমানের কাছ থেকে ডায়েরির একটি কপি ও ফ্রিদার ওপর লেখা আরো দুটি বই হাতে আসায় অনুবাদের সুপ্ত ইচ্ছা পরিণতি লাভ করে। ফ্রিদা কাহ্লোর মতো সাহসী ব্যক্তিত্বকে বাঙালি পাঠকের কাছে তুলে ধরতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।