১৯৫০ সালে রংপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বি. আহমেদ ছিলেন ইন্সপেক্টর অব স্কুলস। রংপুর আদর্শ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৬৮-তে এইচএসসি এবং ১৯৭০-এ বিজ্ঞানেস্নাতক হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গাইবান্ধার মাদারগঞ্জের যুদ্ধ শেষে ভারতের জলপাইগুড়ির বিখ্যাত মুরতি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর একটি গেরিলা দলের কমান্ডার হিসেবে পঞ্চগড় ফ্রন্টের চাউলহাটি ইউনিট বেসের দায়িত্ব নেন। ৬ নম্বর সেক্টরের ৬-এ সাব-সেক্টরের অধীনে তিনি বহু সফল গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনা করে পাকিস্তানি বাহিনীর ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ান। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে মিলিতভাবে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর মুক্তকরণের চূূূূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে উদ্ভিদবিজ্ঞান বাদ দিয়ে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার ডিগ্রি গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৭-৭৮ সালে পোল্যান্ডের ওয়ারশ ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ব্যবস্থাপনায় পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮-এ যুগ্ম সচিব হিসেবে তিনি অবসরে যান। এরপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় পূর্বদেশ পত্রিকার চাঁদের হাটে লেখা প্রকাশ দিয়ে তাঁর লেখালেখির যাত্রা শুরু। স্বাধীনতার পর মূলধারার সব সাময়িকী ও পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক গ্রন্থ গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়কেন্দ্রিক আরো বেশকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এখনো তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার মূল বিষয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৯৪ সালে তিনি গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে গ্রন্থের জন্য বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর লেখনীতে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও অনুপুঙ্খ ঘটনাবলি। কখনো যুদ্ধকৌশল, কখনো উঠে আসে গেরিলা যুদ্ধের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধেরও বিবরণ। যুদ্ধদিন খুবই বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রতিফলিত হয় তাঁর লেখনীতে। যে ক’জন হাতেগোনা মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে মাহবুব আলমের বর্ণনা খুবই মনোগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অসম সাহস ও শৌর্যের সঙ্গে উঠে এসেছে রণাঙ্গনের গভীর ও অনুভূতিময় সূক্ষ্ম বিষয়ও। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দিনলিপি লিখে রাখতেন। সেই দিনলিপিকে ভিত্তি করে তিনি বিরতিহীনভাবে লিখে চলেছেন রণাঙ্গনের বীরত্বগাথা।
১৯৫০ সালে রংপুর শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।শিক্ষা জীবনের শুরু রংপুর আদর্শ বিদ্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজে।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স এ মাস্টার্স শেষ করেন।১৯৭৭ সালে তিনি পোলান্ডের ওয়ার্শ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের এন্ড হাইয়ার ম্যানেজমেন্ট এর উপরে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের ডাকে সারা দিয়ে মাহবুব আলম ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ৬ নং সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং সাহসীকতার সাথে যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করেন।এই পুরোটা সময় তিনি সাথে রেখেছিলেন তিনটি নোট বুক যেখানে প্রতি দিনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।এই নোটবুক গুলোই পরবর্তীতে তার যুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।যুদ্ধ শেষে মাহবুব আলম বিসিএস প্রশাসনে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০৮ সালে যুগ্মসচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।অবসরের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।চাকুরীর সুবাদে দেশবিদেশের বহু জায়গা ঘোরার অভিজ্ঞতা হয় লেখকের।মুক্তিযুদ্ধের লেখায় অবদানের কারনে তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।২০১৪ সালে তিনি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয়দিবস উৎযাপনের জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে অংশ গ্রহণ করেন।তার গল্প নিয়ে "মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর" নামে দেশ টিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়।ব্যক্তিগত জীবনে সহধর্মিণী মর্জিনা বেগম (প্রধান শিক্ষিকা) এবং চার কন্যা সন্তানের জনক মাহবুব আলম ঢাকায় নিজ বাসভবনে থাকেন।তার সহযোদ্ধারা এখনো যুদ্ধ দিনের মত তাদের কমান্ডার মাহবুব ভাই এর কাছে কারনে অকারনে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন।