এই নদী, মানুষ ডুবে মরার মতো নদী এ নয়, পরনের ধুতি বা লুঙ্গি কুচি করে উপরে না তুলে পার হওয়া যাবে এমন নদীও নয়, বর্ষায় জলোচ্ছ্বাস হলে দুকূল ছাপিয়ে মাঠে ক্ষেতে গিয়ে আছড়ে পড়বে, ছলাৎছলাৎ শব্দে ঘুমডোবা রাত্তিরে আচমকা কারও জেগে ওঠাকে চমকে দেবে এরকম কোনো নদী এটাকে বলা যাবে না। এখানে একটা অববাহিকা ছিল, এখানেই বালিচাপা পড়ে আছে কোনো রাজকীয় জনপদ, অথবা বালিগর্ভে ঢুকে আছে রণক্লান্ত ঢাল তলোয়ার, এরকম হদিস আপাতত কেউ দেয় নাই, দিতে পারবে বলেও মনে হয় না। শান্ত গম্ভীর অনেকটা ধ্যানমগ্ন এ নদী ধলাই। গোটা বিশেক যুৎসই বন্যা সে ঠিকই পয়দা করেছে, আশপাশের গাঁওগেরামের ফসল ক্ষেত রাস্তা বাড়ি ঘর ভাসিয়েও দিয়েছে কোনোবার। তারপরও খুব সাদামাটা বলা যায় তাকে। এরকম একটা সাদামাটা নদীর পাড় ঘেঁষে তারও চেয়ে সাদা এবং ফ্যাকাসে একটা জীবন নিয়ে দীন দুনিয়ার আড়ালে একদিন চলে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কুলিমানু।’ মণিপুরী জনপদের এক অদ্ভুত চরিত্র এই কুলিমানু, যে নির্দ্বিধায় কথা বলতে বলতে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে এই উপন্যাস/উপন্যাসিকার কাহিনী। কুলিমানুর মধ্য দিয়ে দেখা যায় রক্ত-ঘাম-মাংসের এক বিপর্যস্ত জীবনের ছবি, সে ছবির মধ্য দিয়ে চেনা যায় প্রান্তবর্তী মানুষের রূপ-রেখা। উপর্যুপরি শ্লেষ আর বক্রোক্তির ভাঙাচোরা অলঙ্কারে বেজে ওঠে চিরন্তন কথার নতুনতর বয়ান।
Shubhashis Sinha- জন্ম ১৯৭৮ সালের ২৯ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে। পিতাÑলালমোহন সিংহ, মাতাÑফাজাতম্বী সিনহা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। নিজ গ্রামে স্বপ্রতিষ্ঠিত মণিপুরি থিয়েটার ও লেখালেখি নিয়ে তৎপর আছেন। তিনি হওয়া না-হওয়ার গান কাব্যগ্রন্থের জন্য এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ লেখক পুরস্কার এবং কুলিমানুর ঘুম উপন্যাসের জন্য ব্র্যাক-ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার) লাভ করেছেন। নাট্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন জাকারিয়া স্মৃতিপদক, তনুশ্রী পদক, আবদুল জব্বার খান স্মৃতিপদক ও জীবনসংকেত সম্মাননা। মণিপুরি সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারতের আসাম থেকে দিলীপ সিংহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার এবং মণিপুরি নাট্যকলায় বাংলাদেশের পৌরি প্রবর্তিত গীতিস্বামী অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন।