বলা হয়ে থাকে- টেলিভিশন হচ্ছে একই সাথে গণচর্চিত এবং গনধর্ষিত মাধ্যম, ‘দ্য মাস্ সিডিউস্ড্ মিডিয়া’। সারাদেশে পত্রিকার পাঠক সর্বসাকূল্যে ৫০ লাখ হতে পারে, কিন্তু টেলিভিশনের দর্শক ৬ কোটির উপরে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন অনেক বেশী শক্তিশালী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত যে কোনো শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে অনেক দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম এবং কার্যকরী। কিন্তু টেলিভিশন তার শক্তিমত্তার অপচয় করছে নিদারুনভাবে। চ্যানেলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে প্রায় ২০টি। দর্শক সংখ্যা যদি না বেড়ে থাকে তাহলে একই চোখ জোড়ার জন্যে বাড়ছে রিমোট হাতে আরো অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা।
যে দেশে একটিও ফিল্ম কিংবা টেলিভিশন ইনস্টিটিউট নেই সেই দেশে এতগুলো চ্যানেলের নির্মাণ কর্মী আসবে কোত্থেকে? কারা নির্মাণ করবে এতো অনুষ্ঠান?
বিদেশী চ্যানেলের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন কিংবা ফিল্টারিং করবার সুযোগটি সরকার নিতে পারছেনা। আমাদের রুচি তৈরীর মহান কাজটিও রয়েছে কেবল অপারেটরদের হাতেই। একদিকে স্পন্সরের কাছে বিক্রি হয়ে আসছে সংবাদের প্রতিটি অংশ। বিজ্ঞাপণের আধিক্যে দর্শকের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। অন্যদিকে সৃজনশীলতার অভাবে নাটককেই বিনোদনের প্রধান আকর্ষন হিসেবে উপস্থাপন করছে বেশীর ভাগ চ্যানেল। এমনকি টেলিভিশনের প্রযোজনায় ৩৫ মিলিমিটার ফরম্যাটে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রিমিয়ার করা হচ্ছে চ্যানেলেই। বলা হচ্ছে ‘ওর্য়াল্ড প্রিমিয়ার’! ঠিক এই মুহুর্তে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একেকটি নিতান্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছূ নয়। অথচ বিনোদনের প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই দেশপ্রেম ও জাতিগঠনে চ্যানেলগুলো যেমন অর্থপুর্ণ ও প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারতো তেমনি হিন্দি চ্যানেল থেকে চোখ ফেরানোর ব্যাপারেও রাখতে পারতো গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু আদতে এর কোনোটাই ঘটছেনা। এতগুলো চ্যানেল হওয়ার পরেও জনপ্রিয় থেকে যাচ্ছে ভারতীয় বাংলা চ্যানেল। সংকট তাহলে কোনখানে? ভাষার জন্যে লড়াই করবার ইতিহাস যদি গর্বের হয়, তাহলে আমাদের ভাষাকে, আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবার দায়িত্বও আমাদেরই। দেশের অর্ধেক মানুষকে অশিক্ষিত রেখে ভাষার কোন গৌরবটা আমরা যথাযথভাবে উপভোগ করতে পারছি? এমনি নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ও প্রশ্ন উত্থাপনের প্রয়াস ছিল অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ‘বিচিন্তা’য় লেখা ‘টেলি-ভীষণ’ কলামে।
লেখাগুলো অক্টোবর ২০১০ থেকে এপ্রিল ২০১১ সময়কালের মধ্যে প্রকাশিত।
প্রসূন রহমান। লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরসহ দেশে পড়াশােনা করেছেন, আইন ও থিয়েটার নিয়ে। দেশের বাইরে পাঠ নিয়েছেন সৃজনশীল লেখনী ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে। দেশে ফিরে তারেক মাসুদের সহযােগী নির্মাতা হিসেবে যােগ দেন ২০০৭ এ। ২০০৮ এ প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রযােজনা সংস্থা-- ইমেশন ক্রিয়েটর। যা পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৃজনশীল, প্রামাণ্য ও জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকে। নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘রাইস এন্ড প্রে’, ‘দ্য ওয়াল’, ‘ফেরা’, ‘নিগ্রহকাল’ (পূর্ণদৈর্ঘ্য), 'নদী ও নির্মাতা’, ‘ব্যালাড অব রােহিঙ্গা পিপল’ (৭ পর্বের সিরিজ) নির্মিত পর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’ (২০১৫), জন্মভূমি (২০১৮) ও ঢাকা ড্রিম’ (মুক্তি প্রতীক্ষিত ২০২০)। প্রথম উপন্যাস— ‘ধূলার অক্ষর’ আর প্রথম কাব্যগল্প সংকলন ‘ঈশ্বরের ইচ্ছে নেই বলে প্রকাশিত হয়েছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে, ২০০৯ সালে। গণমাধ্যম নিয়ে লেখা নিবাচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সৃজনশীলতার সংকটে স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালে, শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে সম্পাদনা করেছেন তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখার সংকলন ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ ও ‘চলচ্চিত্রকথা'।