“মরুতীর্থ হিংলাজ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ মরুতীর্থ হিংলাজ বাংলা ভাষায় রচিত একটি আত্মজৈবনিক কাহিনি। এটির রচয়িতা অবধূত তথা দুলালচন্দ্র মুখােপাধ্যায়। বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। পাকিস্তানে বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত মরু এলাকা ‘হিংলাজ’ হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান; ৫১ শক্তিপীঠের এক পীঠ। মন্দিরের নামেই গ্রামটির নাম হিংলাজ। বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া ও সিন্ধি ভাষায় দেবীর নাম হিংলাজ হলেও মূল সংস্কৃত শব্দটি হলাে “হিঙগুলা”। হিংলাজের তীর্থযাত্রীরা সেকালে যেতেন উটের পিঠে চড়ে। যাত্রা শুরু হত করাচি শহরের কাছে হাব নদীর ধারে। সঙ্গে থাকত এক মাসের রসদ, যেমন শুকনাে খাবার, মরুদস্যুদের প্রতিরােধ করার জন্য অস্ত্র, পানীয় জল ইত্যাদি। এছাড়া সঙ্গে থাকত হিংলাজ মাতার প্রসাদের জন্য শুকনাে নারকেল, মিছরি, বাতাসা ইত্যাদি। এক মাসের অত্যন্ত কঠোর যাত্রার পর শ্রান্ত তীর্থযাত্রীরা পৌঁছতেন হিংলাজে। অঘাের নদীতে স্নান সেরে তাঁরা দর্শন করতে যেতেন হিংলাজ মাতাকে। এই মন্দির স্থানীয় বালুচ মুসলমানদের কাছেও পরম আদরণীয়। তাদের। কাছে এটি “নানী কী হজ” নামে পরিচিত। হিংলাজের মন্দিরটি একটি গুহার মধ্যে অবস্থিত। এটি আসলে একটি অগ্নিকুণ্ড। অগ্নিজ্যোতিকেই হিংলাজদেবীর রূপ বলে মানা হয়। বাঙালী ঔপন্যাসিক কালিকানন্দ অবধূত-রচিত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ এবং ‘হিংলাজের পরে’ উপন্যাস-দুটিতে হিংলাজ ও কোটেশ্বর তীর্থদ্বয়ের বিস্তৃত ও অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। বইটি কেবল হিংলাজে গমনাগমনের কাহিনী নয়, এতে আছে একজন সংসারবিরাগী মানুষের জীবনদর্শন। চমৎকার গদ্যের জন্য এর সাহিত্যমূল্যও উঁচু। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুলালচন্দ্র সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন এবং উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে গিয়ে অবধূত হন। তাঁর নতুন। নাম হয় কালিকানন্দ অবধূত। অবধূত বলতে একরূপ সাধক বােঝায়। হিংলাজ যাত্রা শুরু হয় বাংলা ১৩৫৩ সনের আষাঢ় মাসে। এই উপন্যাসটি অবলম্বনে ১৯৫৯ সালে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন বিকাশ রায় ও উত্তমকুমার।